পাহাড়
অবয়ব
পাহাড় হলো একটি ভূমিরূপ যা আশেপাশের ভূখণ্ডের উপরে উঠে যায়। এর প্রায়শই একটি স্বতন্ত্র চূড়া থাকে। এবং এটি সাধারণত ৬০০ মিটারের কম শিখর উচ্চতাযুক্তকে পাহাড় বলে। এর থেকে বেশি শিখর উচ্চতাযুক্তকে বলা হয় পর্বত। পর্বতের তুলনায় পাহাড়গুলো নিচু ও কম আয়তন বিশিষ্ট হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহু পাহাড় রয়েছে। তবে একটি পাহাড় এবং একটি পর্বতের মধ্যে পার্থক্যটি অস্পষ্ট।
উক্তি
[সম্পাদনা]- দূরে চারি দিকে পাহাড়ের পরিখা, যেন সেইখানে পৃথিবীর শেষ হইয়া গিয়াছে। সেই পরিখার নিম্নে গাঢ় ছায়া, অল্প অন্ধকার বলিলেও বলা যায়। তাহার পর জঙ্গল।
- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পালামৌ, তৃতীয় সংস্করণ, সম্পাদনা- ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস, প্রকাশক- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২১-২২
- আলোর পরশে ফের জাগে দূর সীমানায় ছায়াময় পাহাড়ের রেখা,
হাতছানি দিয়ে ডাকে ‘খৈড়ডি’ বুনো গ্রাম, পাহাড়ের শেষে যায় দেখা।
পাহাড়ের তলে তলে বুনোদের গান চলে, মাদলের ধ্বনি আসে ভেসে;
চলে চলে ডুলি চলে ওই পাহাড়ের গাঁয়ে, তিন-চূড়ো পাহাড়ের দেশে॥- সুনির্মল বসু, তিন-চূড়ো পাহাড়ের দেশে, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩২
- ছেলেবেলায় যখন গিয়েছি ড্যাল্হৌসি পাহাড়ে, পিতৃদেব আমাকে একা একা ঘুরে বেড়াতে কখনো মানা করেন নি। পায়ে-চলা রাস্তায় আমি ফলাওয়ালা লাঠি হাতে এক পাহাড় থেকে আর-এক পাহাড়ে উঠে যেতুম।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ (১৪২৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৭
- আর-এক পাহাড়ে আর-একটি পাখি সে সুর ধরে নিলে। এমনি করতে করতে সমস্ত পাহাড়ে প্রভাতবন্দনা শুরু হয়ে গেল। তখনো সূর্যোদয় হয়নি। ধীরে ধীরে সামনের বরফের পাহাড়ের পিছনে সূর্য উঠছেন। সাদা বরফের চূড়ো দেখাচ্ছে ঘন নীল, যেন নীলমণির পাহাড়। পাখিদের বৈতালিক গান চলেছে তখনো। শেষ নেই—এ-পাহাড়ে, ও-পাহাড়ে, কত পাহাড়ে। যেমন সূর্য উদয় হলেন বৈতালিক গান থেমে গেল।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জোড়াসাঁকোর ধারে, জোড়াসাঁকোর ধারে- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৪
- ব্রহ্মচারী সেই পাহাড়ের উপর উঠিয়া শিখরে দাঁড়াইয়া স্তব্ধ হইয়া শুনিতে লাগিলেন—কি শুনিতে লাগিলেন, বলিতে পারি না। সেই অনন্ততুল্য প্রান্তরেও কোন শব্দ নাই—কেবল বৃক্ষাদির মর্মর শব্দ। এক স্থানে পাহাড়ের মূলের নিকটে বড় জঙ্গল। উপরে পাহাড়, নীচে রাজপথ, মধ্যে সেই জঙ্গল।
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, প্রকাশক- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৫ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ১৫
- পাহাড় শিখায় তাহার সমান
হই যেন ভাই মৌন-মহান্,
খোলা মাঠের উপদেশে—
দিল্-খোলা হই তাই রে।- সুনির্মল বসু, সবার আমি ছাত্র, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৩
- কান্দাহার সেরূপ নয়। বেশ সুন্দর সমতল ভূমি। শহরের মধ্যে প্রবেশ করলে মনে হয় না আশেপাশে পাহাড় রয়েছে। অথচ চামনের দিক থেকে যদি কান্দাহার যাওয়া যায় তবে বুঝতে পারা যাবে কত পাহাড় ডিঙ্গিয়ে তারপর কান্দাহার পৌঁছান যায়।
- রামনাথ বিশ্বাস, কান্দাহার, আফগানিস্থান ভ্রমণ - রামনাথ বিশ্বাস, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- অশোক পুস্তকালয়, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪৮
- ক্রমে সূর্যাস্ত হইল। কিন্তু আমাদের গন্তব্যস্থান বহুদূরে। আমরা চন্দ্রগিরি নামক শেষ পাহাড়ে নামিতে লাগিলাম।
- হেমলতা দেবী, নেপাল যাত্রা, নেপালে বঙ্গনারী - হেমলতা দেবী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭
- পাহাড়ের উপর বিজয়গড়। বিজয়গড়ের অরণ্য গড়ের কাছাকাছি গিয়া শেষ হইয়াছে। অরণ্য হইতে বাহির হইয়া রঘুপতি সহসা দেখিলেন, দীর্ঘ পাষাণদুর্গ যেন নীল আকাশে হেলান দিয়া দাঁড়াইয়া আছে।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজর্ষি, একবিংশ পরিচ্ছেদ, রাজর্ষি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৫
- এইবার এক জায়গায় ওরা এসে উপস্থিত হোল, যেখানে চারিদিকেই চূণাপাথর ও গ্রানাইটের ছোট বড় পাহাড় ও প্রত্যেক পাহাড়ের গায়েই নানা আকারের গুহা। স্থানটার প্রাকৃতিক দৃশ্য রিখটারসভেল্ডের সাধারণ দৃশ্য থেকে একটু অন্য রকম। এখানে বন তত ঘন নয়, কিন্তু খুব বড় বড় গাছ চারিদিকে, আর যেখানে সেখানে পাহাড় ও গুহা।
- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, নবম পরিচ্ছেদ, চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১১৮
- পৃথিবীর মাটি কেঁকড়াইয়া বড়ো-বড়ো পাহাড় পর্বতের সৃষ্টি হয়। সেই-সব পাহাড় উঠিবার সময়ে মাটির স্তরগুলোকে বাঁকাইয়া ফাটাইয়া ভাঙিয়া উলট-পালট করিয়া দেয়। যে মাটি সমানভাবে শোয়ানো ছিল তাহাকে খাড়া করিয়া ঝুলাইয়া দেয়।
- সুকুমার রায়, ভূমিকম্প, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২২০
- যুবতীদের সুরের ঢেউ নিকটের পাহাড়ে গিয়া লাগিতে লাগিল। আমার তখন স্পষ্ট বোধ হইতে লাগিল, যেন সুর কখন পাহাড়ের মূল পর্য্যন্ত, কখন বা পাহাড়ের বক্ষ পর্য্যন্ত গিয়া ঠেকিতেছে; তাল পাহাড়ে ঠেকা অনেকের নিকট রহস্যের কথা, কিন্তু আমার নিকট তাহা নহে, আমার লেখা পড়িতে গেলে এরূপ প্রলাপবাক্য মধ্যে মধ্যে সহ্য করিতে হইবে।
- সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পালামৌ, তৃতীয় সংস্করণ, সম্পাদনা- ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস, প্রকাশক- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৫
- পাগলা-ঝোড়া ঝরনা শাদা পৈতের মতো পাহাড়ের গা বেয়ে গাছ-পালার মধ্যে দিয়ে ঝুলে পড়েছে—এই পাহাড়ের দেওয়াল ডিঙিয়ে হাঁসেরা কার্সিয়ংয়ের মুখে চলল—পাংখাবাড়ি থেকে কারসিয়ং দুধারে ঝরনা আর চা বাগান সবজী-খেত, থাকে-থাকে পাহাড়ের গায়ে পাহাড়ি বস্তি, সাহেবদের কুঠি, কার্সিয়ং শহরটা যেন আর একটা ঝরনার মতো দেখা যাচ্ছে—পাহাড়ি গোলাপ গেঁদা গাছা-আগাছার কুঁড়ি ধরেছে।
- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, টুং-সোন্নাটা-ঘুম, বুড়ো আংলা- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- সিগনেট প্রেস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৭
- …ও পাহাড়…ও পাহাড়….
দেখা হবে কবে আবার…
বুঝি জীবনের নিশি রাতে
…ও পাহাড় তোমার সাথে?- বিলেশ্বর গড়াই, পাহাড়ের দেশে, মেঘ ঢাকা আলো- বিলেশ্বর গড়াই, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশস্থান- চন্দননগর, প্রকাশসাল- ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪০
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় পাহাড় সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে পাহাড় শব্দটি খুঁজুন।
উইকিমিডিয়া কমন্সে পাহাড় সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।