হেমলতা দেবী
হেমলতা দেবী (২৪ জুন ১৮৬৮ – ১২ মে ১৯৪৩) ছিলেন একজন বাঙালি লেখক ও শিক্ষয়িত্রী। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের বিশিষ্ট নেতা শিবনাথ শাস্ত্রীর প্রথম সন্তান। হেমলতা বেথুন কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৯৩ সালে ডাক্তার বিপিনবিহারী সরকারের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। বিবাহের পর স্বামীর কর্মক্ষেত্র নেপালে বসবাস করতেন। এ সময়ে তার রচিত "নেপালে বঙ্গনারী' প্রকাশিত হয়। তিনি কয়েকখানি স্কুলপাঠ্য ও শিশুপাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন করেন। হেমলতা দেবীর ‘তিব্বতে তিন বৎসর’ ধারাবাহিকভাবে ‘প্রবাসী’ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়। হেমলতা দেবীর প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হলো পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর জীবন-চরিত, নেপালে বঙ্গনারী (১৯১১), মিবার-গৌরব-কথা (১৯১২), ভারতবর্ষের ইতিহাস, সমাজ বা দেশাচার (নাটক, ১৩২২), নব পদ্যলতিকা (কবিতাগ্রন্থ, ১৩২২), দুনিয়ার ছেলে, তিব্বতে তিন বছর, দুনিয়ার দেনা (১৯২০) প্রভৃতি।
উক্তি
[সম্পাদনা]- বাঙ্গালা দেশে আমরা বারমাসে তের পার্ব্বণ দেখিয়া আসিতেছি, এখানে ১২ মাসের পূজা পার্ব্বণের সংখ্যা করিয়া উঠাই এক কঠিন ব্যাপার। কি গুর্খা, কি নেওয়ার, নেপালীদিগের ভিতর চির উৎসব চলিয়াছে। এত পূজা পার্ব্বন, আমোদ আহ্লাদ করিয়া কখন যে তাহারা জীবিকা উপার্জ্জনের অবসর পায় তাহাই ত এক সমস্যা। গুর্খাগণ হিন্দু, নেওয়ারগণ পূর্ব্বে বৌদ্ধ ছিল। এই উভয় সম্প্রদায়ের উৎসব এখন নেপালের জাতীয় উৎসব হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই কারণেই নেপালে পূজা পার্ব্বণের এত বাহুল্য দেখা যায়।
- নেপালে বঙ্গনারী - হেমলতা দেবী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
- দিল্লীর মহাপ্রতাপান্বিত সমাট আজ মিবারের রাণার গৃহে অতিথি। আতিথ্য সৎকারের কোন ক্রটিই হইল না। রাজপুতের ভদ্রতা ও সৌজন্য দর্শনে আলাউদ্দীন মুগ্ধ হইলেন। এবং বীনয়নম্রবচনে বারম্বার আপনার অপরাধ স্বীকার করিলেন। বিদায় গ্রহণের পূর্ব্বে পদ্মিনীর প্রতিচ্ছায়া একবার মাত্র দর্পনে প্রতিবিম্বিত হইল। মনে হইল যেন কোন স্বর্গীয় আলোকচ্ছটা মুকুরের মধ্য দিয়া বিদ্যুতের মত চলিয়া গেল! মুগ্ধনেত্র আলাউদ্দীন তৃষিত নেত্রে চাহিয়া রহিলেন!
- মিবার-গৌরব-কথা - হেমলতা দেবী, প্রকাশক- এস, কে, লাহিড়ি এণ্ড কোং, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫
- গোঁসাইথান—নেপালের একটী উন্নত শিখর। গোঁসাইথান নেপালীদের এক প্রধান তীর্থ। গোঁসাইথানের চিরতুষারাবৃত শিখরের নিম্নেই স্তরে স্তরে দ্বাবিংশতিটী তুষার বারিপূর্ণ হ্রদ আছে। এই সকল হ্রদের নিম্নে জিবজিবিয়া পর্ব্বতমালা প্রকার স্বরূপ হইয়া দণ্ডায়মান আছে। এই জিবজিবিয়া দক্ষিনমুখী হইয়া অবশেষে কাঠমণ্ডু উপত্যকার উত্তরে ১৫০০০ ফিট উন্নত মস্তক উত্তোলন করিয়া দণ্ডায়মান রহিয়াছে। গোঁসাইথানের বৃহত্তম হ্রদই নীলকণ্ঠকুণ্ড নামে প্রসিদ্ধ।
- নেপালে বঙ্গনারী - হেমলতা দেবী, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৮ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৭
হেমলতা দেবীকে নিয়ে উক্তি
[সম্পাদনা]- শ্রীমতী হেমলতা দেবী যে ভারতবর্ষের ইতিহাস প্রণয়ন করিয়াছেন স্কুলে-প্রচলিত সাধারণ ইতিহাসের অপেক্ষা দুই কারণে তাহা শ্রেষ্ঠ। প্রথমত তাহার ভাষা সরল, দ্বিতীয়ত ভারতবর্ষের সমগ্র ইতিহাসের একটি চেহারা দেখাইবার জন্য গ্রন্থকর্ত্রী প্রয়াস পাইয়াছেন।
- হেমলতা দেবীর লেখা ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ বইটি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্য, ইতিহাস - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশসাল- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৫