মাহফুজ আলম
অবয়ব
মাহফুজ আলম (মাহফুজ আবদুল্লাহ নামেও পরিচিত) হচ্ছেন ২০২৪-এর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী। তিনি ২০২৪ বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেওয়ার জন্য আলোচিত হন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- যারা '৭২ এর সংবিধানে তথা মুজিববাদে এখনো বিশ্বাস করে, তারা এ দেশের শত্রু। যারা গত ১৬ বছরের কালচারাল ফ্যাসিজমের ভাষা এবং ভঙ্গি এখনো ব্যবহার করে, তারা এ দেশের শত্রু। যারা বিন্দুমাত্র অনুশোচনা এবং ক্ষমা প্রার্থনা বাদে প্রগতিশীলতার বা ধর্মের কোরাম আকারে বিভিন্ন ব্যানারে ঢুকে পড়ছে, তারা দেশের শত্রু। যারা জেনে বুঝে এ রক্তখেকোদের আশ্রয় দিচ্ছে, তারাও এ দেশের শত্রু।
- ফেসবুক পোস্ট। ২৩ আগস্ট ২০২৪।
- যাঁরা ১৯৭১ সালের আকাঙ্ক্ষাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছেন। সেটা করা যাবে না। ১৯৭১-কে পাশ কাটিয়ে এগোতে চাইলে তা আত্মঘাতী হবে।১৯৭১ সালের মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে এখনকার মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে যুক্ত করতে হবে। ... সংবিধান পুনর্লিখন করতে হলে তা ১৯৭১–এর মানুষের আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিক হতে হবে। ... ১৯৭২ সালের সংবিধান আদর্শিকভাবে একপক্ষীয় ছিল। সেখানে দলের মূলনীতি ও সংবিধানের মূলনীতি এক ছিল।
- সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ, সংবিধান প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে।১৯৭১–এর আকাঙ্ক্ষাকে পাশ কাটালে তা আত্মঘাতী হবে : প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম | প্রথম আলো। ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- গণ-অভ্যুত্থান কোন ব্যাকরণ মেনে হয়না বা হয়নি। ফলে, এটার দার্শনিক পাটাতন পুরাতন ভাবাদর্শিক প্রবণতা দ্বারা নির্ধারিত হয়নি। ভাবাদর্শিক কাজিয়া করে এটার ব্যাখ্যা দিতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। বরং, একটা নূতন ভাবাদর্শিক পরিগঠন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে এবং হবে। সেখানে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা মুক্ত মোর্চাগুলো সম্মিলিত হয়ে নূতন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাবে।
- ফেসবুক পোস্ট। ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- এদেশকে মুজিববাদী এবং খারেজি তাকফিরি ইসলাম পন্থীদের খেলার জায়গা বানাতে দেয়া হবে না। এ মাটি তাদের না! তারা এ মাটির সাথে বেঈমানি করেছেন। ভুলে যাবেন না, জঙ্গিবাদীরাই সাবেক বিএনপি জামায়াত সরকারকে ব্যর্থ করে দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের দীর্ঘদিনের জন্য ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এ দুই ক্যাম্পকে সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ভাবে প্রতিহত করতে হবে।
- ফেসবুক পোস্ট। ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- আমি (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের) মাস্টারমাইন্ড ছিলাম না। তবে ৫ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমার সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া হয়ছিল। ... ৯ দফাসহ অন্যান্য দফা আমার থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। গত পাঁচ বছর ধরে সকল প্রোগ্রাম ও বয়ান আমার হাতে লেখা হয়েছিল। আমি চ্যালেঞ্জগুলো পার করতে পারলে আপনারা অবশ্যই সব জানতে পারবেন।
- আমি মাস্টারমাইন্ড ছিলাম না: মাহফুজ আলম | বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।
- আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট ছিল যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির যে বয়ান আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে, সেটি টিকিয়ে রেখে আওয়ামী লীগকে কখনোই পরাজিত করা যাবে না।
মুক্তিযুদ্ধের পরে আওয়ামী লীগের কারণে জাতীয়ভাবে রিকনসিলিয়েশন (পুনর্মিলন) না হতে পারা একটা বড় ব্যর্থতা। আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে শত্রু বানিয়ে রেখেছে। খালি চোখে আমরা হয়তো কেবল জামায়াত–শিবিরকে দেখব, কিন্তু তাদের নামে সব সময় বড় একটা জনগোষ্ঠী নিপীড়িত হয়েছে।
- ভাবাদর্শ আর সাংস্কৃতিক ফল্টলাইনে (বিভাজক রেখায়) বাংলাদেশকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। এই বিভাজক রেখা নিয়ে বিভিন্ন ক্রীড়নকেরা ভূমিকা রাখছে। আমাদের তাই চিন্তা ছিল এই বিভাজক রেখাকে কীভাবে মুছে ফেলা যায়, কীভাবে এর মীমাংসা করা যায়। গত ৫০ বছরে এর মীমাংসা হয়নি, কিন্তু আমাদের চেষ্টা ছিল।
- আমাদের প্রাথমিক বাসনা ছিল সারা বাংলাদেশে ছাত্রশক্তিকে বিস্তৃত করা। ... আমাদের ভাবনা ছিল ছাত্রশক্তি আগে শক্তিশালী হবে, তারপর আমরা রাজনৈতিকভাবে আবির্ভূত হব। ... আন্দোলনের ৫ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সময়টা ছাত্রশক্তির সদস্যরা সমগ্র বাংলাদেশে আন্দোলনের সাংগঠনিক বিস্তার ঘটালেন। ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আমরা সেই অর্থে কোনো রাজনৈতিক, এমনকি বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থনও পাইনি। ... আমরা ভাবছিলাম, একে বড় একটা ছাত্র-নাগরিক আন্দোলনে পরিণত করে তোলা যায় কি না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সাল, কিন্তু সুযোগ তৈরি হলে এখনই কেন নয়!
- ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি সম্পর্কে। বিশেষ সাক্ষাৎকার: পর্ব–১: মাহফুজ আলম। এই গণ–অভ্যুত্থান নিজেই একটা বড় মীমাংসা | প্রথম আলো। ০৩ অক্টোবর ২০২৪।
- এই আন্দোলনে মেয়েদের সম্পৃক্ততা ছিল বিরাট। এখন অনেকে ভুলে গেলেও এ কথাটা সত্য যে মেয়েরা না থাকলে এই আন্দোলন কোনোভাবেই সফল হতো না। ১০ শতাংশ কোটা থাকা সত্ত্বেও মেয়েরা এসে বলল, আমরা কোটা চাই না। কেন? কারণ তাদের আত্মমর্যাদায় লাগছিল। আত্মমর্যাদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শেখ হাসিনা দেশের আপামর মানুষের আত্মমর্যাদা ভেঙে ফেলেছিল।
- রাষ্ট্রের একটা থাকে ওপরের দিক, আরেকটা অন্তস্তলের দিক। অন্তস্তলই ওপরের দিকটা ঠিক করে দেয়। তাই সেটা ঠিক না করে উপরিতল ঠিক করার অর্থ হলো পুরোনো ময়লার ওপর নতুন চাদর বিছিয়ে দেওয়া। ... মানুষ বড় ধরনের পরিবর্তন চাইছে; কেবল ক্ষমতার পালাবদলের নয়, বরং ক্ষমতা–কাঠামোর পালাবদলের বন্দোবস্ত। তারা চায় আত্মসম্মান আর বৈষম্যহীনতা বা সমতা।
- রাষ্ট্র যদি ইসলামকে জায়গা করে দিতে চায়, তাহলে তো ইসলামই সীমিত ও নিপীড়নের অনুষঙ্গ হয়ে যাবে। ইসলামি উম্মাহর ধারণা তো বিশ্বজনীন। জাতিরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেটা খাটে না। বিদ্যমান জাতিরাষ্ট্রের কাঠামোয় ইসলাম বা শরিয়াহ বাস্তবায়ন অসম্ভব। ... যদি পুরোপুরি শরিয়াহর প্রশ্ন আসে, তাহলে শরিয়াহও পাওয়া যাবে না, রাষ্ট্রও না। রাষ্ট্র একটা ত্রিশঙ্কু দশায় পড়বে। এখানকার মুসলমানরা আরও খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়ে যাবে। আলেমদের এটা বোঝা উচিত। রাষ্ট্রের ভেতরে ধর্মের মীমাংসা সেরে ফেলা উচিত।
- বিশেষ সাক্ষাৎকার: পর্ব–২: মাহফুজ আলম | প্রথম আলো। ০৩ অক্টোবর ২০২৪।
- নাগরিক হিসেবে অবশ্যই সবার সমান হিস্যা থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় পরিসরের দিক থেকে মৌলিক যে নাগরিক অধিকার, তা তো একজন মুসলমানের জন্য যা, একজন আহমদিয়া, হিন্দু, বৌদ্ধ, চাকমা, সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসীর জন্যও একই হতে হবে।
- বিশেষ সাক্ষাৎকার: পর্ব–২: মাহফুজ আলম | প্রথম আলো। ০৩ অক্টোবর ২০২৪।
- বাংলাদেশে তরুণের সংখ্যা বিপুল। পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংস্কার না করলে, আদর্শের প্রশ্নে বড় সংস্কার না করলে মানুষ কেন তাদের ভোট দেবে? ‘না’ ভোটের বিকল্প থাকলে সে সংখ্যা বরং বেড়ে যাবে।
- বিশেষ সাক্ষাৎকার: পর্ব–২: মাহফুজ আলম | প্রথম আলো। ০৩ অক্টোবর ২০২৪।
- যাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নাই গণহত্যা নিয়ে, তাদের সাথে নো রিকন্সিলিয়েশন। আগে বিচার, তারপর সমঝোতা! মুজিববাদের বিরুদ্ধে এবার হবে প্রত্যাঘাত। খুনীদের ক্ষমা নাই। খুনীদের আদর্শের ফেরিওয়ালাদের ক্ষমা নাই। নির্মূলের রাজনীতি আমরা করতে চাই নাই। কিন্তু, আমাদের রক্ত পান করতে যারা শ্লোগান দিবে, রাজনীতি করবে- সেসকল মুজিববাদীদের কোনভবেই ক্ষমা করা হবে না। দু'হাজার বা ততোর্ধ্ব শহিদের আত্মার শপথ, কোন সুশীল বা গুন্ডা মুজিববাদীদের এ স্বদেশের এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেয়া হবে না।
ফ্যাসিস্ট মুজিব হাসিনা
মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ।।- ফেসবুক পোস্ট। ১৫ অক্টোবর ২০২৪। (ইত্তেফাক)।
- আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাই। আর নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানেই নতুন সংবিধান। সেটা কিন্তু এক দফার ঘোষণাতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি এক দফার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পুরোনো পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট সম্পূর্ণ বাতিল হয়েছে।
- সংবিধান সংস্কার বা পুনর্লিখন প্রসঙ্গে। অন্তর্বর্তী সরকারই নতুন সংবিধান কার্যকর করবে : মাহফুজ আলম অন্তর্বর্তী সরকারই নতুন সংবিধান কার্যকর করবে : মাহফুজ আলম। ঢাকা পোস্ট, ৩ নভেম্বর ২০১৪।
- শেখ মুজিব ও তাঁর মেয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে যা করেছেন, তার জন্য আওয়ামী লীগকে অবশ্যই দায়স্বীকার করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—অগণতান্ত্রিক ’৭২-এর সংবিধান থেকে শুরু করে দুর্ভিক্ষ, হাজার হাজার কোটি অর্থ পাচার, হাজার হাজার ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধীদের বিচারবহির্ভূত হত্যা (১৯৭২-’৭৫, ২০০৯-’২৪)।
মাফফুজ আলম সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- কেউ যদি ভেবে থাকেন, মাহফুজ আলম একা, তাহলে তারা মারাত্মক ভুল করবেন। আমরা যারা মাহফুজের সাথে আছি, আমরা থাকবই। কারন মাহফুজ হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে হাজির হয়নি। সমাজের দ্বন্দ্ব সংগ্রামের মধ্য থেকেই তরুণরা হজির হয়েছে। তারাই ভবিষ্যত। সমাজকে চিনুন, মাহফুজদেরও চিনবেন। মাহফুজ, আখতার, নাহিদ, আসিফ, নুসরাত, আরিফ, তুষার, উমামা, হাসনাত, সারজিস, নাজিফা, আবু বকর, তরিকুল, সানজানাদের পয়দা করতে একটি জনগোষ্ঠির দশকের পর দশক লেগে যায়।
- ফরহাদ মজহার। ফেসবুক পোস্ট; ১২ অক্টোবর ২০২৪। ইত্তেফাক।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় মাহফুজ আলম সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।