রজনীকান্ত সেন
অবয়ব

রজনীকান্ত সেন (২৬ জুলাই, ১৮৬৫ - ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০) একজন প্রখ্যাত কবি, গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সমসাময়িক ছিলেন। ভক্তিমূলক ও স্বদেশ প্রেমই তাঁর গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও উপজীব্য বিষয়। পিতা গুরুপ্রসাদ সেন ও মাতা মনোমোহিনী দেবীর তৃতীয় সন্তান ছিলেন রজনীকান্ত। স্বদেশী আন্দোলনে রজনীকান্তের গান ছিল অসীম প্রেরণার উৎসস্থল। প্রায়শঃই তার গানগুলোকে কান্তগীতি নামে অভিহিত করা হতো। কবি হিসেবেও তিনি যথেষ্ট সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। নির্মল আবেগ ও কোমল সুরের ব্যঞ্জনায় তার গান ও কবিতাগুলো হয়েছে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ।
উক্তি
[সম্পাদনা]- বাবুই পাখীরে ডাকি’ বলিছে চড়াই,—
“কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই?
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে!”
বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তায়!
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়;
পাকা হোক্, তবু ভাই, পরের ও-বাসা;
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর—খাসা!"- স্বাধীনতার সুখ - রজনীকান্ত সেন, অমৃত, প্রকাশক- অমিয়রঞ্জন মুখােপাধ্যায়, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬
- তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল-করে,
মলিন মর্ম মুছায়ে;
তব, পূণ্যকিরণ দিয়ে যাক্, মোর
মোহ-কালিমা ঘুচায়ে।- রজনীকান্ত সেনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, সম্পাদনা- ড. বারিদবরণ ঘোষ, প্রকাশক- ভারবি, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ- আশ্বিন ১৪০৮, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ২১
- মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়
মাথায় তু’লে নেরে ভাই;
দীন-দুখিনী মা যে তোদের
তার বেশি আর সাধ্য নাই।- সংকল্প, বাণী - রজনীকান্ত সেন, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৩
- আমি আইন ব্যবসায়ী, কিন্তু আমি ব্যবসায় করিতে পারি নাই। কোন দুর্লঙ্ঘ্য অদৃষ্ট আমাকে ঐ ব্যবসায়ের সহিত বাঁধিয়া দিয়াছিল, কিন্তু আমার চিত্ত উহাতে প্রবেশ লাভ করিতে পারে নাই। আমি শিশুকাল হইতে সাহিত্য ভালবাসিতাম; কবিতার পূজা করিতাম, কল্পনার আরাধনা করিতাম; আমার চিত্ত তাই লইয়া জীবিত ছিল।
- রজনীকান্ত সেনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, সম্পাদনা- ড. বারিদবরণ ঘোষ, প্রকাশক- ভারবি, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ- আশ্বিন ১৪০৮, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ৭
- আমরা, নেহাৎ গরীব, আমরা নেহাৎ ছোট;
তবু, আজি সাত কোটি ভাই, জে’গে ওঠ!- আমরা, বাণী - রজনীকান্ত সেন, তৃতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৫
- আমায় সকল রকমে কাঙ্গাল করেছে,
গর্ব করিতে চূর,
তাই যশঃ ও অর্থ, মান ও স্বাস্থ্য,
সকলি করেছে দূর৷
ওইগুলো সব মায়াময় রূপে
ফেলেছিল মোরে অহমিকা-কূপে,
তাই সব বাধা সরায়ে দয়াল
করেছে দীন-আতুর;- দয়ার বিচার, রজনীকান্ত সেনের শ্রেষ্ঠ কবিতা, সম্পাদনা- ড. বারিদবরণ ঘোষ, প্রকাশক- ভারবি, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ- আশ্বিন ১৪০৮, সেপ্টেম্বর ২০০১, পৃষ্ঠা ১৪১
- বাজার হুদ্দা কিন্যা আইন্যা, ঢাইল্যা দিচি পায়;
তোমার লাগে কেম্তে পারুম, হৈয়্যা উঠছে দায়!
আর্সি দিচি, কাহই দিচি, গাও মাজনের হাপান দিচি,
চুলে বান্দনের ফিত্যা দিচি, আর কি দ্যাওন যায়?- বুড়ে৷ বাঙ্গাল, কল্যাণী - রজনীকান্ত সেন, পঞ্চম সংস্করণ, প্রকাশক- গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২৫
- শৈশবে সদুপদেশ যাহার না রোচে,
জীবনে তাহার কভু মূর্খতা না ঘোচে।
চৈত্র মাসে চাষ দিয়া না বোনে বৈশাখে,
কবে সেই হৈমন্তিক ধান্য পেয়ে থাকে?- উপযুক্ত কাল, অমৃত - রজনীকান্ত সেন, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪২
- গুরুবাক্য শিরে ধর,
সজ্জনের সঙ্গ কর,
সদালাপে কাল হর,
অবশ্য কুশল হবে।- উপদেশ, সদ্ভাব কুসুম - রজনীকান্ত সেন (১৯১৩), প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দ (১৩২০ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪৮
রজনীকান্ত সেনকে নিয়ে উক্তি
[সম্পাদনা]- রজনীকান্ত সেনের রচনার সঙ্গে এ-যুগের ছেলেমেয়েদের পরিচয় ক্রমেই কমে আসছে, খুবই দুঃখের কথা সন্দেহ নেই। তাঁর গানের সম্মোহিনী মায়া দেশবাসী এত শীঘ্র না কাটালেই গুণগ্রাহিতার পরিচয় দিত। তাঁর “মাতৃবর্ণনা” একটি অতুলনীয় সম্পদ;—
- অনুরূপা দেবী, সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী, প্রকাশক- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫৬ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ৩৭৮
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় রজনীকান্ত সেন সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিসংকলনে রজনীকান্ত সেন রচিত অথবা সম্পর্কিত রচনা রয়েছে।