যুক্তবঙ্গ
অবয়ব
(অখণ্ড বাংলা ও অখণ্ড বাঙালি থেকে পুনর্নির্দেশিত)
অখণ্ড বাংলা হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার উত্তরপূর্বে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক অঞ্চল। এই অঞ্চলটি বর্তমানে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের কয়েকটি রাজ্য নিয়ে গঠিত।অখণ্ড বাংলাকে ও বাঙালিদেরকে বিভিন্ন সময় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারণে ভাগ করা হয়েছিল কিন্তু দেশপ্রেমিক বাঙালিরা সব সময় বাংলাকে ও বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য চেষ্টা করে গিয়েছেন।
- এটা ১৯৪৭ সালের কথা। তখন আমি মিস্টার সোহরাওয়ার্দীর দলে ছিলাম। তিনি এবং শরৎচন্দ্র বসু একটি অখন্ড বাংলা চান। আমিও চাই সকল বাঙালির জন্য একটি দেশ। বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কী না করতে পারত! তারা বিশ্ব জয় করতে পারত।
- অন্নদাশঙ্কর রায়ের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটি বলেছিলেন।[১]
- বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল-
পূণ্য হউক, পূণ্য হউক, পূণ্য হউক হে ভগবান।।
বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ-
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান।।
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা-
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান।।
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন-
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।।- ১৯০৫ সালের ১৭ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখিত "বাংলার মাটি বাংলা জল" গানটির অংশ।
- বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।
- কাজী নজরুল ইসলাম। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধ, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, সপ্তম খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৫৬
- "বাঙালির ঐক্যের প্রতীক নজরুল"। ভোরের কাগজ। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১০।
- কাজী নজরুল ইসলাম। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধ, নজরুল-রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, সপ্তম খণ্ড, প্রকাশক- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৫৬
- পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গে আমাদের একই সংস্কৃতি একই ইতিহাস একই ঐতিহ্য। আমাদের আলাদা করে রাখা যাবে না।
- ১৯৫৪ সালে কলকাতার একটি জনসভায় আবুল কাশেম ফজলুল হকের ভাষণের অংশবিশেষ [২]
- আমি জীবনের প্রান্তসীমায় উপনীত। আমার আর কোনও আকাঙ্ক্ষা নেই।আমি যদি দুই বাংলার মধ্যাকার এই মিথ্যার প্রাচীর অপসারিত করবার কাজ শুরু করতে পারি, তা হলেই আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।
- ১৯৫৪ সালে কলকাতায় শান্তি সেনার পক্ষ থেকে আয়োজিত একটি সভায় আবুল কাশেম ফজলুল হক সাহেব আবেগজড়িত কণ্ঠে এটি বলেন।[৩]
- যে স্বপ্নগুলি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং আমার জীবনের একটি উদ্দেশ্য দিয়েছে তা হল একটি মহান এবং অবিভক্ত বাংলা … এমন একটি বাংলা যেটি সমস্ত সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে এবং মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং বৌদ্ধ সকলের আবাসস্থল।
- নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ) গঠনের প্রায় এক দশক আগে, নেতাজি উনার সহবাঙালিদের উদ্দেশ্যে এই আবেগপূর্ণ বার্তাটি লিখেছিলেন।[৪]
- আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না।
- ১৯৭২ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত, সাপ্তাহিক হক কথা পত্রিকায় মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এটি ঘোষণা দিয়েছিলেন।[৫]
- দেশ তো রাজনৈতিকভাবে ভাগ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি অখণ্ড ও অবিভাজ্য। গঙ্গার পানির অধিকার যেমন দুই বাংলার মানুষ চায়, তেমনি বাংলা সংস্কৃতির অধিকারও দুই বাংলার মানুষের। এই ঐতিহ্য-চেতনা যদি সারা পৃথিবীর বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে জাগানো যায় ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হতে পারে, হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ভিত্তিতে একটি কালচারাল নেশন বা সাংস্কৃতিক জাতি গড়ে তুলতে পারে, তাহলে তারা হয়তো বাঙালির মুক্তি আনতে পারে। এই অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সাংস্কৃতিক জাতি পরবর্তীকালে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের সীমানা চিহ্নিত করবে।
- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সাথে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন।[৬]
- পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গের মধ্যে আরও দৃঢ়তার ভ্রাতৃত্ববন্ধন আবশ্যক।
- আমি বরাবরই বাংলার ভবিষ্যৎ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করে আসছি, কোনরূপ ভারতীয় রাষ্ট্রসংঘের অংশ হিসেবে নয়। অনুরূপ কোন রাষ্ট্র একবার সংস্থাপিত হলে, তার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার ওপর। … বাংলা যদি মহান হতে চায় তবে সে শুধু তার নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই তা হতে পারবে। তাকেই নিজের সম্পদের অধিকারী ও নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা হতে হবে।
- এটা (অখণ্ড স্বাধীন বাংলা) বস্তুত একটি মহান দেশে পরিণত হবে, ভারত উপমহাদেশে যা হবে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। এখানে জনগণ উন্নত জীবন ধারণের সুবিধা নিয়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জন করে কালক্রমে এ দেশ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করতে সমর্থ হবে। সোহরাওয়ার্দী এ মর্মে আরও অভিমত ব্যক্ত করেন যে, হিন্দু ও মুসলমানরা সম্মিলিতভাবে বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হলে এক সময়ে বাংলার সঙ্গে তৎসংলগ্ন ও বিহর প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত মানভূম, সিংহভূম ও পূর্ণিয়া জেলা এবং আসাম প্রদেশের সুরমা এলাকার সংযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।দেশবিভাগকে কেন্দ্র করে দু’সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান হলে আসামের বাকি অংশ বাংলার সঙ্গে একীভূত হয়ে একক রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসবে।
- আমাদের মনে এই বিশ্বাস আছে, পূর্ববঙ্গে যদি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলে হিন্দিভাষীদের দ্বারা শাসিত এবং নির্যাতিত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাও একসময় স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে ইচ্ছুক হবে।
- বাংলাদেশ বিপ্লবী পরিষদের আঁকা স্বাধীন বাংলার পতাকা প্রসঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান [১০]
অন্যান্য বাঙালিদের উক্তি
[সম্পাদনা]- বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা রোধ করা যেত যদি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং পূর্ববঙ্গ মিলে সকল সম্প্রদায়ের একটি স্বাধীন দেশ হতো।
- ভাষা নিয়ে জাতি, জাতি নিয়ে দেশ।
- তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়
আছো সারোওয়ার্দী, শেরেবাংলা, ভাসানীর শেষ ইচ্ছায়।- প্রিন্স মাহমুদের 'বাংলাদেশ' গানের অংশবিশেষ।[১৩]
- ১৯৪৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্বাধীন অখন্ড বাংলা রাষ্ট্র গঠনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ছিল না। তা ছিল বাঙ্গালীর স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে দীর্ঘ প্রয়াস তারই অংশ বিশেষ। সেদিন সে উদ্যোগ সফল হয়নি বটে তবে বাঙ্গালীর স্বাধীন রাষ্ট্র ভাবনা এর সঙ্গে বিলুপ্ত না হয়ে বরং পাকিস্তানী পর্বে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে তা অগ্রসর হয়ে '৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
- ড. হারুন-অর-রশিদ। [১৪]
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় যুক্তবঙ্গ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।