জয় বাংলা
জয় বাংলা একটি স্লোগান যা বাংলাদেশে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে ব্যবহৃত হয়। এটি বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান। ১৯২২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম তার ভাঙার গান কাব্যে ‘পূর্ণ-অভিনন্দন’ কবিতায় সর্বপ্রথম "জয় বাঙলা" শব্দ যুগল ব্যবহার করেন। নজরুলের কাব্যে উৎপত্তির পর কালক্রমে এটি স্লোগানে পরিণত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্লোগান জনগণকে তাদের মুক্তিসংগ্রামে প্রবলভাবে প্রেরণা যুগিয়েছিল। ভারতের বাঙালি অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বরাক উপত্যকার লোকেরাও বাঙালির ঐক্য বোঝাতে এর ব্যবহার করে থাকে। এর আগে বাঙালি কখনো এত তীব্র, সংহত ও তাৎপর্যপূর্ণ স্লোগান দেয় নি, যাতে একটি পদেই প্রকাশ পেয়েছে রাজনীতি, সংস্কৃতি, দেশ, ভাষার সৌন্দর্য ও জাতীয় আবেগ। জয় বাংলা স্লোগান ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন বাঙালির প্রেরণার উৎস। সফল অপারেশন শেষে বা যুদ্ধ জয়ের পর অবধারিত ভাবে মুক্তিযোদ্ধারা চিৎকার করে "জয় বাংলা" স্লোগান দিয়ে জয় উদ্যাপন করত।
উক্তি
[সম্পাদনা]• | জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি অন্তরীণ, |
কাজী নজরুল ইসলাম। "ভাঙার গান" কাব্যের "পূর্ণ অভিনন্দন" কবিতার অংশ। |
- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা!
- ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র- দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশক- হাক্কানী পাবলিশার্স, ঢাকা, প্রকাশসাল- ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭০৬
- জয় বাংলা, জয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
- ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার ভাষণ শেষ করেন এই স্লোগানটির মাধ্যমে।[১]
- আমি, মেজর জিয়া, বাংলাদেশের মহান নেতা, সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং জানাচ্ছি যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সরকার ইতোমধ্যেই গঠিত হয়েছে।এছাড়াও ঘোষণা করা হচ্ছে যে, শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের ৭ কোটি ৫০ লাখ মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের একমাত্র বৈধ সরকার। এই সরকার আইনসিদ্ধ ও সাংবিধানিকভাবে গঠিত হয়েছে এবং বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। আমি, তাই আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সরকার, বিশেষ করে বৃহৎ শক্তিগুলো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই—বাংলাদেশের বৈধ সরকারকে স্বীকৃতি দিন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আমাদের, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের, বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অভিহিত করা নিছক উপহাস ছাড়া কিছুই নয়, এবং এতে কেউ বিভ্রান্ত হবে না। নতুন রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলো হবে—প্রথমত: নিরপেক্ষতা, দ্বিতীয়ত: শান্তি, তৃতীয়ত: সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি শত্রুতা নয়।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। জয় বাংলা!- জিয়াউর রহমান, ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা।[২] [৩]
- ‘জয় বাংলা’ বলতে মনরে আমার এখনো কেন ভাব,
আমার হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো,
অন্ধকারে পুবাকাশে উঠবে আবার দিনমণি।- গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। "শোনো একটি মুজিবরের থেকে" গানের অংশ।
- আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে?- সৈয়দ শামসুল হক। "আমার পরিচয়" কবিতার অংশ।
- ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গকে বৃহত্তর বাংলাদেশ বানাতে চায়।
- দিলীপ ঘোষ [৪]
- এটা মনে রাখতে হবে, ‘জয় বাংলা’ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান। সেটি এই রাজ্যে ব্যবহার করার লক্ষ্য তোষণ রাজনীতি। এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে ভারত থেকে আলাদা করার কথা।
- মোহিত রায় [৫]
- ‘‘জয় বাংলা’’ শেখ মুজিবুর রহমানের স্লোগান। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম বেতার ভাষণে এই স্লোগান ব্যবহার করেছিলেন। সেটি এখনও বাংলাদেশে সমানভাবে রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই স্লোগান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন করছেন, তা মানুষ বোঝে।
- পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য [৬]
- একটা সময়ে দুই বাংলাই এক ছিল। এখনও দুই বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সবকিছুতে দারুণ মিল। সেই হিসেবে স্লোগানেও মিল থাকাটা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য আর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। স্লোগানের মধ্যে গ্রেটার বাংলাদেশ বানানোর লক্ষ্য খোঁজার পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। আর আছে বাংলার মানুষের সমর্থন না পাওয়ায় বিজেপি নেতাদের হতাশা।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]