ব্যবহারকারী:Kaim Amin/আলী যাকের
অবয়ব
আলী যাকের (৬ নভেম্বর ১৯৪৪ - ২৭ নভেম্বর ২০২০) ছিলেন একজন বাংলাদেশী অভিনেতা, ব্যবসায়ী ও কলামিস্ট। দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব যাকের টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকে সমান জনপ্রিয়। আলী যাকের বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি-র কর্ণধার ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন। তার সহধর্মিনী সারা যাকেরও একজন অভিনেত্রী।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন।
উক্তি
[সম্পাদনা]- সবকিছু ভুলতে পারলেও ভুলতে পারি না এই মঞ্চ। যতবার নাটক নিয়ে মঞ্চে উঠি, প্রতিবারই যেন আমার পুনর্জন্ম হয়।
- তার সর্বশেষ গ্যালিলিও নাটক শেষ করার পর, ১৪ অক্টোবর ২০১৮, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
- আগে শুদ্ধ উচ্চারণ শেখ তারপর অভিনয়।
- নবাগতদের উদ্দেশে, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- আমাদের বাঙালির মধ্যে তো একটা চিরায়ত ব্যাপার আছে যে, একটি ঝোলা থাকবে, পায়জামাটা একটু ময়লা, পাঞ্জাবিটার একটু কোণা ছেঁড়া ... হাঃ হাঃ
- কনজিউমার পারসেপন সম্পর্কে, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- আমি সরাসরি এবং দলগত রাজনীতি কখনোই করবো না। আমি একেবারে নিজস্ব সময় চাই নিজের মতো করে। রাজনীতিবীদদের নিজস্ব কোনো সময় নেই।
- রাজনীতি সম্পর্কে, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- আমি ধার্মিক নই নিঃসন্দেহে। আর আমি জানি যে পান করাটা স্বাস্থের জন্য ভালো নয়, আবার পরিমিত পান ভালো। এক সময় প্রচুর পান করেছি, মানে সোস্যাল ড্রিংকার। এখন সম্পূর্ণ পানহীন। কোনো কিছুরই এক্সট্রিম ভালো না। আর ধর্ম টর্ম আমি করি না। মুসলমানের যেমন নিজস্ব ধর্ম আছে- ইসলাম, ঠিক তেমনি আমার ধর্ম মানবিকতা।
- ধর্ম ও পানাহার সম্পর্কে মন্তব্য, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- ধরো আমার দল হ্যামলেট করবে, কিন্ত হ্যামলেট চরিত্রটি করবার মতো কেউ নেই, সেক্ষেত্রে আমি অন্য দলের কাছে তেমন যোগ্য কাউকে ধার চাইব। আমি এ ধরনের এক্সচেঞ্জ চাচ্ছি। বাট ইট মাস্ট নট বি কমার্শিয়ালি এক্সপ্লোয়েটেড।
- নাটকে স্টারিজম সম্পর্কে, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- কিংলিয়র চরিত্রটি করতে এখনও মন চায়। দেখা যাক কখনো যদি পেরে উঠি তো করবো।
- কোন চরিত্র না করতে পারার অতৃপ্তি, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- দর্শককে যদি ধরে রাখার কথা হয় তাহলে বরং নাটক তরলীকৃত হবে। দর্শক আসবে, এট দ্য সেইম টাইম ভালো নাটকও হবে, এটা একটু ডিফিকাল্ট। এটা শিল্পের বড় একটা চ্যালেঞ্জ। জীবিকার জন্য অভিনয়টাকে যদি এখন পেশা হিসেবে নেয়া হয় তাহলে তো সিনেমায় অভিনয় করতে হবে কিন্তু সেটাতো অভিনয় হবে না। যেটা ফরীদি এক সময় বলতো যে- আমি তো অভিনয় ছাড়া কিছু জানি না, অভিনয় করেই আমি খাবো। এটা বলে যখন সে সিনেমায় অভিনয় করা শুরু করলো, সেটাকে কি অভিনয় হিসেবে ধরে নিই?
- নাটক দর্শকের ভালো লাগা সম্পর্কে, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- থিয়েটার কিন্তু একটা মেধা সংক্রান্ত ব্যাপার। দর্শককে থিয়েটারে আসতে হবে নিজের জীবন দেখতেই কেবল নয়, জীবন কেমন হওয়া উচিত এবং অন্যদের জীবন কেমন এ সব কিছু নিয়ে তাকে ভাববার প্রস্তুতি থাকতে হবে। আর মিডিয়াগত কারণেই মঞ্চের প্রেজেন্টেশন এক রকম আর টেলিভিশনের এক রকম। দুজায়গায় একই জিনিস চাইলে বিপদ আছে। যেমন আশির দশকে আমাদের থিয়েটারে একটা ধস নেমেছিল। নামার কারণটা হচ্ছে, অকিঞ্চিৎকর কিছু নাট্যজন ভেবেছিল যে টেলিভিশনে যা করা হয় সেটা যদি স্টেজে তুলে ধরা যায় তাহলে দর্শক ভীড় করবে। কিন্তু ব্যাপারটা ফেল করেছে। এদিকেও হয়নি, ওদিকেও হয়নি।
- দর্শকের মঞ্চনাটক ও টেলিভিশনের মধ্যে পার্থক্য, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- বাংলা নাট্যরীতি নিয়ে কিছু কিছু নাট্যজন নিরন্তর গবেষণা করে যাচ্ছেন। লেখালেখি করছেন এবং বাংলা থিয়েটারের সোনালী অতীত সম্বন্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। আমি এই পর্যন্ত তাঁদের সাথে আছি অর্থাৎ তাঁদের মতামতের সাথে একমত আছি। কিন্তু যখনই তাঁরা এমত কথা বলেন যে, আমাদের নাট্যকলার কাজকর্মে কোনো বিশেষ রীতির প্রতিফলন অনিবার্য, তখন আমার দ্বিমত পোষণ করা ছাড়া উপায় থাকে না। প্রায়োগিক শিল্পকলা কি কোনো বিশেষ রীতির দ্বারা আবদ্ধ হতে পারে বা হওয়া উচিত? থিয়েটারে আমরাতো প্রতিদিনই নতুন কিছু আবিষ্কার করছি। এবং এই আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হয়ে আমাদের কাজকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য হওয়া উচিত।
- বাংলা নাট্যপ্রয়োগরীতির পাশ্চাত্যমুখীতা সম্পর্কে, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- মঞ্চনাটক বলতে যা বোঝায় তা বোঝানোর জন্যই বাকি ইতিহাস থেকেই এই চিন্তাটা মাথায় ছিল যে, নিয়মিত চর্চাটা করতে হবে। এবং এটা করতে গেলে অনেক বাহুল্য বাদ দিতে হবে। এটা আমার প্রফেশনই শিখিয়েছে যে কনজিউমার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে নাটকটাকে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, দর্শককে কীভাবে আটকানো যায়। তো আমরা নাটকটি এমনভাবে করবো যে- বেল দেয়ার পর নাটক শুরু হবে আর নাটক শেষ না হওয়া পর্যন্ত দর্শক দম ফেলার সময় পাবে না। তখন দর্শক নিশ্চয় ভাববে যে কী দেখলাম!
- দর্শকদের সম্পর্কে, ২০০৫-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
- আমাদের দলের নাটকে কিন্তু রাজনীতিটা মুখ্য হয়ে ধরা দেয়নি। পলিটিক্যাল থিয়েটার যাকে বলে আমরা সেটা করিনি ... করলেও রাজনীতির জন্য করিনি, করেছি থিয়েটারের জন্য। যেমন কোপেনিকের ক্যাপ্টেন- এটা কিন্তু আমাদের জন্যে ভীষণভাবে রেলিভেন্ট।
- নাটকে রাজনীতির ভূমিকা সম্পর্কে, উদ্ধৃত: আলাপনে আলী যাকের
তার সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]- বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় আজকে যে টিকিটের বিনিময়ে নিয়মিত নাট্যচর্চা হয়, তার শুরুটা করেছিলেন আলী যাকের। এখন নিয়মিত টিকিট কেটে দর্শক নাটক দেখছেন। প্রথম যখন শুরু করা হয়, তখন নানা রকম সংশয় ছিল; দর্শক টিকিট কেটে নিয়মিত নাটক দেখতে আসবেন কিনা? কিন্তু নাগরিক যখন সেই যাত্রা শুরু করল, তা পরে নিয়মিত একটি ধারা হয়ে উঠল। আলী যাকের এই যাত্রার পথিকৃৎ।
- আসাদুজ্জামান নূর, ২৪ নভেম্বর ২০২৩, উদ্ধৃত: যুগান্তর
- বাবা চলে যাওয়ার আগে অনেকটা সময় তার সান্নিধ্যে পেয়েছি এটাই আনন্দের। বাবা ও আমার একই দিনে জন্মদিন হওয়ায় দিনের প্রথমভাগে আমার জন্মদিন উদযাপন হতো। রাতে থাকত বাবাকে ঘিরে আয়োজন। সেখানে বাবার বন্ধুরা থাকতেন। আজ বাবা নেই, সব শূন্য লাগে।
- ইরেশ যাকের, ৬ নভেম্বর ২০২২, উদ্ধৃত: প্রতিদিনের বাংলাদেশ
- আলী যাকেরকে আমরা সবসময় মনে করি। যারা তার অভিনয়, নির্দেশনা দেখেছেন তারাও মনে করেন। ধ্যানে জ্ঞানে তিনি আছেন। নাট্যচর্চাকে বেগবান করতে তার অবদান ভুলবার নয়। অনেক দিয়ে গেছেন তিনি। নাট্যজগতকে একটি অবস্থানে নিয়ে গেছেন।
- সারা যাকের, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে, উদ্ধৃত: দ্য ডেইলি স্টার
- তাঁকে নিয়ে মঞ্চে কথা বলতে হবে, ভাবিনি। বেঁচে থাকলে আজ তাঁর জন্মদিন সবাই মিলে উদ্যাপন করতাম। কিন্তু জন্মদিন উদ্যাপনের পরিবর্তে আয়োজনটি স্মৃতিচারণায় পরিণত হলো। এই কীর্তিমান মানুষটি সব সময় সৃষ্টির চিন্তায় নিমগ্ন থাকতেন। আজ তাঁর সামনে যদি তাঁর গুণের কথা বলতে পারতাম, তাহলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এটা মেনে নিয়েই বলতে চাই আলী যাকের এক প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা মানুষ। গুণী ও আলোকিত এই মানুষটি অভিনয়ে নিষ্ঠাবান ছিলেন।
- আবুল হায়াত, ৬ নভেম্বর ২০২১, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
- “অচিন বৃক্ষ” নাটকেও আমাকে থাপ্পড় খেতে হয়। ঘটনাটা ছিল, একদল বিদেশি আসে একটি অচিন গাছ দেখতে। তাদের সঙ্গে আলী যাকের বসে কথা বলছেন। আমি কাজের ছেলে হয়ে তাদের কথার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন কথা বলি। পরে আলী যাকের রেগে আমাকে ডেকে দূরে নিয়ে গিয়ে থাপ্পড় মারেন। যাকের ভাই ছিলেন স্বাস্থ্যবান, তাঁর হাতের পাঞ্জা ছিল মোটা। সেদিন প্রথম থাপ্পড় খেয়ে আমি মাটিতে পড়ে যাই। ব্যথায় আমার মাথা ঘুরতে থাকে। যাকের ভাই দ্রুত আমাকে তুলে নেন। দুঃখ প্রকাশ করেন। সেদিন সারাক্ষণ আমাকে আদর করে বলতে থাকেন, “মনে কষ্ট রাখিস না।”আলী যাকের আমাকে বোঝান, “যদি জোরে থাপ্পড় না মারতাম, দৃশ্যে বাস্তবতা প্রকাশ পেত না।”
- ফারুক আহমেদ, ৬ নভেম্বর ২০২৩-এ প্রকাশিত নিবন্ধে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো
- আলী যাকের অনেক বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন। তার দেহের ভাষা অন্যরকম ছিল, যা অভিনয় বুঝত। তার কথা বলবার ভঙ্গিটাও মুগ্ধ করত। নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে থিয়েটারে যুক্ত করেন। আমি শ্রেণী সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে লাগলাম মঞ্চ নাটকে আর আলী যাকের নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
- মামুনুর রশীদ, ৬ নভেম্বর ২০২৩, উদ্ধৃত: দ্য ডেইলি স্টার
- আলী যাকের আমাদের ছটলু ভাই। অনেক দিন আমরা শুটিং সেটে সময় কাটিয়েছি। একবার তিনি আমাকে বলেছিলেন— জীবনানন্দ পড়ুন। জীবনানন্দ তার ভীষণ প্রিয় ছিলেন।
- জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ২৪ নভেম্বর ২০২৩, উদ্ধৃত: যুগান্তর