বিষয়বস্তুতে চলুন

ভাষা

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

ভাষার একটি কার্যনির্বাহী সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায় যে ভাষা মানুষের মস্তিষ্কজাত একটি মানসিক ক্ষমতা যা অর্থবাহী বাকসংকেতে রূপায়িত (বাগযন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বনিভিত্তিক রূপে বা রূপে) হয়ে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করতে এবং একই সমাজের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য কণ্ঠধ্বনি এবং হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে। কণ্ঠধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে ইঙ্গিতের সাহায্যে ততটা পারে না। আর কণ্ঠধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবও প্রকাশ করতে সমর্থ হয়।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • মনুষ্যেরা মুখ দ্বারা শব্দ উচ্চারণ করিয়া মনের ভাব ও অভিপ্রায় প্রকাশ করে। ঐ সকল শব্দের উচ্চারণ বিষয়ে জিহ্বাই প্রধাম সাধন। এরূপ শব্দ উচ্চারণ করাকেই কথা কহা বলে; এবং সেই উচ্চারিত শব্দের নাম ভাষা। যে শক্তি দ্বারা ঐরূপ শব্দ উচ্চারণ করতে পারা যায় তাহাকে বাকশক্তি কহে।
  • পূর্ব্ব কালে ভারতবর্ষে যে ভাষা প্রচলিত ছিল তাহার নাম সংস্কৃত। সংস্কৃত পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ভাষা অপেক্ষা প্রাচীন ও উৎকৃষ্ট। এই ভাষা এখন আর চলিত ভাষা নয়। কিন্তু ইহাতে অনেক ভাল ভাল গ্রন্থ আছে। এক্ষণে ভারতবর্ষে যত ভাষা চলিত, সংস্কৃত প্রায় সকলেরই মূল স্বরূপ। সংস্কত ভাল না জানিলে এদেশের কোন ভাষাতেই উত্তম ব্যুৎপত্তি জন্মে না।
  • হৃদয়, কেন গো মোরে ছলিছ সতত,
    আপনার ভাষা তুমি শিখাও আমায়!
    প্রত্যহ আকুল কণ্ঠে গাহিতেছি কত,
    ভগ্ন বাঁশরীতে শ্বাস করে হায় হায়!
  • ‘ভাষা’ শব্দটি আমরা নানা অর্থে প্রয়ােগ করি। জাতিবিশেষের কথা ও লেখার সামান্য লক্ষণসমূহের নাম ভাষা, যথা-বাংলা ভাষা। আবার, শব্দাবলীর প্রকার —অর্থাৎ কোন্ শব্দ বা শব্দের কোন্ রূপ প্রয়ােজ্য বা বর্জনীয় তার রীতিও ভাষা, যথা—সাধুভাষা। আবার, প্রকার এক হ'লেও ভঙ্গীর ভেদও ভাষা, যথা—আলালী, বিদ্যাসাগরী বা বঙ্কিমী ভাষা।
  • লৈখিক ও মৌখিক ভাষার ভঙ্গীগত ভেদ অনিবার্য, কারণ, লেখবার সময় লােকে যতটা সাবধান হয় কথাবার্তায় ততটা হতে পারে না। কিন্তু দুই ভাষার প্রকারগত ভেদ অস্বাভাবিক। কোনও এক অঞ্চলের মৌখিকভাষার প্রকার আশ্রয় করেই লৈখিকভাষা গড়তে হবে।
  • ভারতবর্ষের কতকগুলি বিশেষ ভাষাকে ভাষাবিজ্ঞানী গৌড়ীয় ভাষা নাম দিয়ে তাদের মেলবন্ধন করেছেন। আমি বাঙালি, মারাঠি ভাষা শুনলে তার অর্থ বুঝতে পারি নে; কিন্তু দুটো ভাষাই যে এক জাতের, ভাষাবিজ্ঞানীরা সেটা ধরতে পেরেছেন তাদের কাঠামো থেকে।
  • ভাষামাত্রেরই একটা মজ্জাগত স্বভাব আছে, তাকে না মানলে চলে না। স্কটল্যাণ্ডের ও ওয়েল্‌সের লোকে সাধারণত আপন স্বজন-পরিজনের মধ্যে সর্বদাই যে-সব শব্দ ব্যবহার করে থাকে তাকে তারা ইংরেজি ভাষার মধ্যে চালাবার চেষ্টামাত্র করে না। তারা এই সহজ কথাটি মেনে নিয়েছে যে, যদি তারা নিজেদের অভ্যস্ত প্রাদেশিকতা ইংরেজি ভাষায় ও সাহিত্যে চালাতে চায় তা হলে ভাষাকে বিকৃত ও সাহিত্যকে উচ্ছৃঙ্খল করে তুলবে। কখনো কখনো কোনো স্কচ লেখক স্কচ ভাষায় কবিতা প্রভৃতি লিখেছেন কিন্তু সেটাকে স্পষ্টত স্কচ ভাষারই নমুনা স্বরূপে স্বীকার করেছেন। অথচ স্কচ ও ওয়েল্‌স ইংরেজের সঙ্গে এক নেশনের অন্তর্গত।
    • ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর <ref name="ek">https://rabindra-rachanabali.nltr.org/node/8773উদ্ধৃতি ত্রুটি: শুরুর <ref> ট্যাগটি সঠিক নয় বা ভুল নামে রয়েছে
  • উর্দু ভাষায় পারসী ও আরবী শব্দের সঙ্গে হিন্দী ও সংস্কৃত শব্দের মিশল চলেছে—কিন্তু স্বভাবতই তার একটা সীমা আছে। ঘোরতর পণ্ডিতও উর্দু লেখার কালে উর্দুই লেখেন, তার মধ্যে যদি তিনি ‘অপ্রতিহত প্রভাবে’ শব্দ চালাতে চান তা হলে সেটা হাস্যকর বা শোকাবহ হবেই।
    • ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর []
  • আমাদের গণশ্রেণীর মধ্যে য়ুরেশীয়েরাও গণ্য। তাঁদের মধ্যে বাংলা লেখায় যদি কেউ প্রবৃত্ত হন এবং বাবা মা শব্দের বদলে পাপা মামা ব্যবহার করতে চান এবং তর্ক করেন ঘরে আমরা ঐ কথাই ব্যবহার করে থাকি তবে সে তর্ককে কি যুক্তিসংগত বলব? অথচ তাঁদেরকেও অর্থাৎ বাঙালি য়ুরেশীয়কে আমরা দূরে রাখা অন্যায় বোধ করি। খুশি হব তাঁরা বাংলা ব্যবহার করলে কিন্তু সেটা যদি য়ুরেশীয় বাংলা হয়ে ওঠে তা হলে ধিক্‌কার দেব নিজের ভাগ্যকে। আমাদের ঝগড়া আজ যদি ভাষার মধ্যে প্রবেশ করে সাহিত্যে উচ্ছৃঙ্খলতার কারণ হয়ে ওঠে তবে এর অভিসম্পাত আমাদের সভ্যতার মূলে আঘাত করবে।
    • ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর []

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
  1. ১.০ ১.১ উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ek নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি