মরুভূমি

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে এ উত্তাপে পথহাঁটা চলে না। যদি সে কোনরকমে এই ভয়ানক মরুভূমির হাত এড়াতে পারতো, তবে হয়তো জীবন্ত অবস্থায় মানুষের আবাসে পৌঁছুতেও পারতো। সে ভয় করে শুধু এই মরুভূমি, সে জানে কালাহারী মরু বড় বড় সিংহের বিচরণভূমি।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

মরুভূমি বলতে বোঝায় অত্যন্ত শুস্ক, বৃষ্টিবিরল ও বালি দ্বারা আবৃত অঞ্চল। মরুভূমি অঞ্চলে দিনে তাপমাত্রা অনেক বৃদ্ধি পায় আর রাতে সেই তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। সাহারা মরুভূমি হলো পৃথিবীর বৃহত্তম মরু অঞ্চল। মরুভূমির আবহাওয়া অত্যন্ত রূক্ষ হওয়ায় এখানে স্বাভাবিকভাবে গাছপালা জন্মাতে পারে না। মরুভূমিতে মরীচিকা দেখা যায়।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • মরুভূমির কথা বলিতে গেলেই উটের কথা আসিয়া পড়ে। উটের শরীরটিকে মরুভূমির উপযোগী করিয়াই গড়া হইয়াছে। চ্যাটাল চ্যাটাল পা, তার আষ্টেপৃষ্টে কড়ায় ঢাকা-ঝামা দিয়া ঘসিলেও তাহাতে ফোস্কা পড়ে না। ক্ষুধা নাই, তৃষ্ণা নাই—এক পেট ঘাস খাইয়া তিন দিন উপোস থাকে—এক ঢোক জল লইয়া সারাদিন পথ চলে।
    • সুকুমার রায়, মরুর দেশে, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৯
  • রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে এ উত্তাপে পথহাঁটা চলে না। যদি সে কোনরকমে এই ভয়ানক মরুভূমির হাত এড়াতে পারতো, তবে হয়তো জীবন্ত অবস্থায় মানুষের আবাসে পৌঁছুতেও পারতো। সে ভয় করে শুধু এই মরুভূমি, সে জানে কালাহারী মরু বড় বড় সিংহের বিচরণভূমি।
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ, চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৬
  • আমার মরুভূমিতে মরুদ্যান ছিল না, ছিল মরীচিকা। সকলের মুখই কঠিন কঠোর। নিজের মুখ যতই বিষণ্ণ করি না কেন অন্যের মুখে স্নেহের নরম ছায়া নামে না।
    • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, লোটাকম্বল- সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক- সপ্তর্ষি, কলিকাতা, প্রকাশসাল- ১৩৭০ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ৯
  • পর্বত নাই, অশ্বত্থ, বট প্রভৃতি বৃহৎ বৃহৎ বৃক্ষ নাই, উর্বরা-ক্ষেত্র নাই, বেগবতী তরঙ্গিনী নাই, পর্বতবেষ্টিত হ্রদ নাই, কেবল মরুভূমিতে বালুকারাশি ধূ ধূ করিতেছে ও স্থানে স্থানে অতি ক্ষুদ্রকায় কণ্টকময় বাবুল ও অন্যান্য বৃক্ষ দেখা যাইতেছে।
    • রমেশচন্দ্র দত্ত, মাধবীকঙ্কণ- রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৫৪
  • বাস্তবিক ‘মরুভূমি’ বলিতে কেবল সেই-সব দেশকেই বুঝায় যেখানে বারো মাস কেবল বালির স্তুুপ ছাড়া আর কিছু দেখিবার জো নাই-যেখানে শুকনা বালি রৌদ্রে তাতিয়া সমস্ত দেশটাকে একেবারে শুকাইয়া রাখে। সারা বছর সেখানে বৃষ্টি নাই—গাছপালার মধ্যে ক্বচিৎ কোথাও একটু সুবিধা পাইয়া হয়তো দু-দশটি মনসা গাছ মাথা তুলিয়াছে। মরুভূমির ধারে কিনারায় হয়তো দু-চারিটা সাপ বিছা বা গিরগিটি মাঝে মাঝে দেখা যায় কিন্তু যতই ভিতরে যাও ততই দেখিবে জনপ্রাণীর কোনো সাড়া নাই।
    • সুকুমার রায়, মরুর দেশে, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৭
  • মরুভূমিতে মরীচিকা দেখিতে পাওয়া যায় এ কথাই জানিতাম। ও জিনিস যে মরুভূমি ছাড়িয়া আমাদের এত কাছে আসিয়া বসিয়া আছে, তাহা কি আর আমি জানি। কাজেই তখন আমি তাহার মর্ম বুঝিতে না পারিয়া উহাকে জলই মনে করিয়াছিলাম।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, পুরী, বিবিধ প্রবন্ধ, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৭৯
  • একে মরুভূমি, তাহাতে প্রচণ্ড আতপতাপ, বিশেষ ছায়াশূন্য প্রান্তর,—বিশ্রাম করিবার স্থান অতি বিরল। দেশীয় পথিকের পক্ষে বরং সহজ, অপরিচিত ভিন্ন দেশীয় পথিকের পক্ষে এই মরুস্থানে ভ্রমণ করা নিতান্তই দুঃসাধ্য।
    • মীর মশাররফ হোসেন, চতুর্থ প্রবাহ, বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন, প্রকাশসাল- ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ (১২৯১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০-২১
  • বুকজলে নামিয়া মুখ বাড়াইলে মাটি দেখা যায়। এই মাটিটাই সত্য। এই মাটিই যখন জাগিয়া উঠিত প্রথম প্রথম দুঃস্বপ্ন বলিয়া মনে হইত। এখন ঐ মাটিই স্বাভাবিক। জল যে আসিয়াছে ইহা একটা স্বপ্নমাত্র। মনোহর। কিন্তু যখন চলিয়া যাইবে ঘোরতর মরুভূমি রাখিয়া যাইবে। সে মরুভূমি রেণু রেণু করিয়া খুঁজিলেও তাতে একটি মাছ থাকিবে না।
    • অদ্বৈত মল্লবর্মণ, ভাসমান, তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- পুথিঘর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৪২৩-৪২৪
  • কহ, সখি, ফুটিবে কি এ মরুভূমিতে কুসুম
    কানন?
    জলহীনা স্রোতস্বতী, হবে কি লাে জলবতী,
    পয়ঃ সহ পয়ােদে কি বহিবে পবন?
    • মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ব্রজাঙ্গনা কাব্য - মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্রকাশসাল- ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দ (১২৭১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৯
  • দমকা বাতাসের ঝাপটায় মরুভূমির তপ্ত বালি হু হু করিয়া ছুটিতে থাকে, বাতাসের আঁচে আর বালির ঘষায় সর্বাঙ্গে ফোস্কা পড়িয়া যায়, ধুলায় অন্ধ হইয়া দম আটকাইয়া মানুষগুলা পাগলের মতো ছুটিতে থাকে। তার উপর বাতাসের ঘুর্ণীটানে মরুভূমির বালি যখন পাক দিয়া উঠিতে থাকে তখন সেই বালুস্তম্ভের মুখে যে পড়ে তাহার আর রক্ষা নাই। বালির স্তম্ভে চাপা পড়িয়া কত বড়ো-বড়ো যাত্রীদল যে মারা গিয়াছে তাহার আর হিসাব নাই।
    • সুকুমার রায়, মরুর দেশে, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৮৮
  • মরুভূমি সম জীবন প্রান্তর ধূ ধূ করে তোমা হারায়ে।
    দরশন-আশা দারুণ পিপাসা রহিবে তৃষিত হৃদয়ে।
    • জ্যোতিষ্মতী দেব, জানাব হৃদয়-যাতনা, মালা- জ্যোতিষ্মতী দেব, প্রকাশসাল- ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩২২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৫৭
  • সে দৃশ্য অতি ভয়ঙ্কর—তথা হইতে দূরে চলিলাম। এখানে যাহা দেখিলাম, তাহা আরও ভীষণ, আরও হৃদয়বিদারক! দেখিলাম মরুভূমি শোণিত-রঞ্জিত! রক্তপ্রবাহ বহিতে পারে নাই—যেমন রক্তপাত হইয়াছে, অমনি পিপাসু মরুভূমি তাহা শুযিয়া লইয়াছে। সেই সব রেখায় লেখা—“পিপাসা, পিপাসা”।
    • রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, পিপাসা (মহরম), রোকেয়া রচনাবলী- রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, প্রকাশসাল- ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬-৭
  • এ পর্ব্বতও মরুভূমির সামিল, খাদ্য এখানে মেলে না, জলও না। সে মরা শকুনিটা নিয়ে এসে আগুন জ্বেলে ঝলসাতে বসলো। এর আগে মরুভূমির মধ্যেও সে শকুনির মাংস খেয়েচে। এরাই এখন প্রাণ ধারণের একমাত্র উপায়, আজ ও খাচ্চে ওদের, কাল ওরা খাবে ওকে।
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ, চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ (১৩৫২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৪
  • জলদেবীর মতন জেগে জানিয়ে গেছ তুমি
    চম্বা কনকবতী এখন সুধার মরুভূমি
    মরুভূমি—মরীচিকা—মায়ামৃগের মেলা।
    • জীবনানন্দ দাশ, মকরসংক্রান্তি প্রাণে, বনলতা সেন- জীবনানন্দ দাশ, প্রকাশক- নিউ স্ক্রিপ্ট, কলকাতা, অষ্টম মুদ্রণ: অগ্রহায়ণ ১৪২৪ (নভেম্বর ২০১৭), পৃষ্ঠা ৫৬
  • মহর্ষি, আপনি চণ্ডালরূপী ইন্দ্রকে ফিরিয়ে দিয়ে অন্যায় করেছেন। যাই হ’ক, আমি বর দিচ্ছি, আপনার পিপাসা পেলেই মেঘ উদিত হয়ে এই মরুভূমিতে জলবর্ষণ করবে, সেই মেঘ উতঙ্কমেঘ নামে খ্যাত হবে। বর পেয়ে উতঙ্ক প্রীত হয়ে সেখানে বাস করতে লাগলেন। এখনও উতঙ্কমেঘ সেই মরুভূমিতে জলবর্ষণ করে।
    • কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস, অনুগীতাপর্বাধ্যায়, অনুবাদক- রাজশেখর বসু, মহাভারত - রাজশেখর বসু, প্রকাশক- এম. সি. সরকার এন্ড সন্স লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৩৯

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]