শবনম
অবয়ব
শবনম সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪ - ১৯৭৪) রচিত একটি উপন্যাস যা ১৯৬০ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। আফগানিস্তানের শিক্ষকতায় নিয়োজিত এক তরুণ বাঙালি যুবক, মজনূঁনের সাথে আফগান রাজ পরিবারের কন্যা শবনমের পরিচয়, প্রেম, বিবাহ ও আফগানিস্তানের বাদশাহ আমানুল্লাহর ক্ষমতাচ্যুতির প্রেক্ষাপটে তাদের মধ্যে অসমাপ্ত বিরহ নিয়েই উপন্যাসটি রচিত। বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখনীর কাব্যিকতা, বিদেশী শব্দ ও কবিতার প্রয়োগ উপন্যাসটিকে বিশেষত্ব দান করেছে।
উক্তি
[সম্পাদনা]প্রথম খণ্ড
[সম্পাদনা]- প্রথম দেখেছিলুম কপালটি। যেন তৃতীয়ার ক্ষীণচন্দ্র। শুধু, চাঁদ হয় চাঁপা বর্ণের, এর কপালটি একদম পাগমান পাহাড়ের বরফের মতই ধবধবে সাদা। সেটি আপনি দেখেন নি? অতএব বলব নির্জলা দুধের মত। সেও তো আপনি দেখেন নি। তা হলে বলি বন- মল্লিকার পাপড়ির মত। ওর ভেজাল এখনো হয় নি। নাকটি যেন ছোট বাঁশী। ওইটুকুন বাঁশীতে কি করে দুটো ফুটো হয় জানি নে। নাকের ডগা আবার অল্প অল্প কাঁপছে। গাল দুটি কাবুলেরই পাকা আপেলের মত লাল টুকটুকে, তবে তাতে এমন একটা শেড রয়েছে যার থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় এটা রুজ দিয়ে তৈরী নয়। চোখ দুটি নীল না সবুজ বুঝতে পারলুম না। পরণে উত্তম কাটের গাউন। জুতো উঁচু হিলের।
- [শবনমের সাথে প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনায়] অধ্যায় এক, পৃ. ১৬, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- ‘…বা-ঙ্গা-লা মুল্লুক! সেখানে তো শুনেছি পৃথিবীর শেষ। তার পর নাকি এক বিরাট অতল গর্ত। যতদূর দেখা যায়, কিছু নেই, কিছু নেই। সেখানে তাই রেলিঙ লাগানো আছে। পাছে কেউ পড়ে যায়। বাঙালীরাও নাকি তাই বাড়ি থেকে বেরয় না।’ আমি জানতুম, ভারতবর্ষে যে-সব কাবুলী যায় তারা বাঙলাদেশের পরে বড় কোথাও একটা যায় নি। এ সব গল্প নিশ্চয়ই তারা ছড়িয়েছে।
- অধ্যায় এক, পৃ. ১৮, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- যে বিধাতা প্রতিটি ক্ষুদ্র কীটেরও আহার জুগিয়ে দেন, তিনিই তো তৃষিত হিয়ার অপ্রত্যাশিত মরূদ্যান রচে দেন। কিন্তু তার কাছে তখন সেটা অলৌকিক। কুবেরের লক্ষ মুদ্রা লাভ অলৌকিক নয়, কিন্তু নিরন্নের অপ্রত্যাশিত মুষ্টি-ভিক্ষা অলৌকিক। কিংবা বলব, সরলা গোপিনীদের কৃষ্ণলাভ অলৌকিক-ইন্দ্রসভায় কৃষ্ণের প্রবেশ দৈনিন্দন ঘটনা।
- অধ্যায় দুই, পৃ. ২২, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- রাজারও একটা গর্দান, আমারও একটা। অথচ আশ্চর্য রাজার গর্দান গেলে বিশ্বজোড়া হৈ-চৈ পড়ে যায় – আমার বেলা হবে না।
- অধ্যায় দুই, পৃ. ২৩, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- আকাশের জল আর চোখের জল তো একই যুক্তি-কারণে ঝরে না।
- অধ্যায় দুই, পৃ. ২৩, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- পাগলামির প্রথম চিহ্ন, পাগল একই কথা বার বার বলে, একই গ্রাস বার বার চিবিয়ে চলে, গিলতে পারে না।
- অধ্যায় দুই, পৃ. ২৪, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- এক দোর বন্ধ হলে দশ দোর খুলে যায়; বোবার এক মুখ বন্ধ হলে দশ আঙুল তার ভাষা তর্জমা করে দেয়।
- অধ্যায় চার, পৃ. ২৮, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- যে চার্বাক ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না, তিনি নাকি মঞ্জুভাষা'র কাছ থেকে তাঁর প্রেমের প্রতিদানের আশা পেয়ে একদিনের তরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছিলেন।
- অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৩৩, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- একটি কথা, দুটি চাউনি, তাতেই দেহের ক্ষুধা, হৃদয়ের তৃষ্ণা, মনের আকাঙ্ক্ষা সব ঘুচে যায়, সব পরিপূর্ণ হয়ে যায়!
- অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৩৩, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- বললুম, ‘তুমি ওই তাম্বু, মানে বোরকা পর কেন?’ ‘স্বচ্ছন্দে যেখানে খুশী আসা-যাওয়া করা যায় বলে। আহাম্মুখ ইউরোপীয়ানরা ভাবে, ওটা পুরুষের সৃষ্টি, মেয়েদের লুকিয়ে রাখবার জন্য। আসলে ওটা মেয়েদেরই আবিষ্কার – আপন সুবিধের জন্য।’
- অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৩৪, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- শোন দিল-ই-মন, (আমার দিল) – মুর্খই হও আর সোক্রাৎই (সক্রাটিস) হও, প্রেম কেউ লুকিয়ে রাখতে পারে না। শোন,… “সরল হৃদয় মনে করে প্রেম লুকায়ে রাখিতে পারে, কাঁচের ফানুস মনে মনে ভাবে লুকায়েছে শিখাটারে।”
- [শবনমের উদ্ধৃতিতে] অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৩৭, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- প্রেমের সঙ্গে সূর্যেরই শুধু তুলনা হয়। আকাশ আর মুখ এক। ঘড়ি ঘড়ি রঙ বদলায়। সূর্য চিরন্তন। প্রেম সূর্য একবার দেখা দিলে আর কোন ভাবনা নেই, চিন্তা নেই।
- [শবনমের উদ্ধৃতিতে] অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৩৮, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না… ওইটুকুতেই আমার চলবে।
- [শবনমের উদ্ধৃতিতে] অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৩৯, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
দ্বিতীয় খণ্ড
[সম্পাদনা]- অনাদৃতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কোনো কোনো মেয়ের স্বভাব।
- অধ্যায় তিন, পৃ. ৫৫, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- মাকে যদি কেউ ভালবাসে এক তিল, মা তাকে বাসে একতাল। আমাকে যদি কেউ ভালবাসে এক কণা, মা তাকে বাসবে দুই দুনিয়া – ইহলোক, পরলোকে।
- [মজনূঁন, তার মা সম্পর্কে] অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৮১, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- ‘দুখ-রজনীর প্রেমের প্রদীপ ভাসায়ে দিলেম আমি
দীরঘ নিশ্বাস পালেতে দিলেম জানে অন্তরযামী। শেষ দীপ-শিখা দিলেম তোমারে মোর কিছু নাহি আর 'রা এসো বঁধু, বেগে এস প্রভু, নামাও বেদানাভার।’
- [শবনমের লেখনীতে] অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ৮৩, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- পরিপূর্ণ আনন্দের সময় মানুষের মন ভিন্ন ভিন্ন দিকে ধায় না। একটা আনন্দ নিয়ে সে পড়ে থাকতে ভালবাসে। শিশুর মত একটি পুতুলই বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুতে যায়।
- অধ্যায় ছয়, পৃ. ৮৮, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- সুস্থ বর স্বাভাবিক অবস্থায়ও পরের দিন ঠিক ঠিক বলতে পারে না [বিয়ের দিন] কি কি হয়েছিল, কোনটার পর কি ঘটেছিল।
- অধ্যায় সাত, পৃ. ৯১, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- নববধূকে জবরজঙ্গ করে সাজানোতে একটা গভীর তত্ত্ব রয়েছে। রূপহীনার দৈন্য তখন এমনই চাপা পড়ে যায় যে, সহৃদয় লোক ভাবে, ‘আহা, একে যদি সরল সহজ ভাবে সাজানো হত তবে মিষ্টি দেখাতো’; আর সুরূপার বেলাও ভাবে ওই একই কথা – ‘না সাজালে তাকে আরও অনেক বেশী সুন্দর দেখাতো।’
- অধ্যায় সাত, পৃ. ৯৭, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- প্রত্যেক মানুষই জুপিটার। তার দেবরূপ উন্মোচন করা বিপজ্জনক।
- [শবনমের উদ্ধৃতিতে], অধ্যায় সাত, পৃ. ১০০, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- কাব্যলোকে বাস না করলে বাস কি করব ইতিহাসলোকে, না দর্শনলোক, না ডাক্তারদের ছেঁড়া-খোঁড়ার শবলোকে? আর এ সব কোনও লোকেই যদি বাস না করি তবে তো নেমে আসবও সেই লোকে – গাধা গরু যেখানে ঘাস চিবোয় আর জাবর কাটে।
- [শবনমের উদ্ধৃতিতে], অধ্যায় সাত, পৃ. ১০৮, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
তৃতীয় খণ্ড
[সম্পাদনা]- তুমি আমার মিলনে অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না।
- [শবনমের উদ্ধৃতিতে] অধ্যায় এক, পৃ. ১১৮, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- জীবনই অভিজ্ঞতা, আর অভিজ্ঞতাই জীবন। অভিজ্ঞতাসমষ্টির নাম জীবন আর জীবনকে খণ্ড খণ্ড করে দেখলে এক-একটি অভিজ্ঞতা। এক-একটি অভিজ্ঞতা যেন এক এক ফোঁটা চোখের জলের রুদ্রাক্ষ। সব কটা গঁথা হয়ে যে তসবী-মালা হয় তারই নাম জীবন।
- অধ্যায় তিন, পৃ. ১৩৪, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- বাচ্চারা পেয়েছে বাদাম। ভাগাভাগি নিয়ে লেগেছে ঝগড়া। পণ্ডিত নসর উদ্দীন খোজা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিরীক্ষণ করতে করতে আল্লার প্রশংসাধ্বনী (হামদ) উচ্চারণ করছিলেন। ছেলেরা তাঁকে মধ্যস্থ মানলে ভাগ-বখরা করে দেবার জন্যে। তিনি হেসে শুধালেন, ‘আল্লা যেভাবে ভাগ করে দেয় সেই ভাবে, না মানুষের মত ভাগ করে দেব?’ বাচ্চারাও কিংবা বলব বাচ্চারাই আল্লার গুণ মানে বেশী, সমস্বরে বললে, ‘আল্লার মত।’ খোজা কাউকে দিলেন পাঁচটা, কাউকে দুটো, কাউকে একটাও না। বাচ্চারা অবাক হয়ে শুধালে, ‘একি? একে কি ভাগ করা বলে?’ খোজা গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখ, আল্লা মানুষকে কোনও কিছু সমান সমান দিয়েছেন কি না। সে-রকম সমান ভাগাভাগি শুধু মানুষই করে।’
- অধ্যায় তিন, পৃ. ১৩৫, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- শক্তকে ভাঙ্গা যায়, নরমকে ভাঙ্গা শক্ত।
- অধ্যায় চার, পৃ. ১৪৪, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- চোখ মেলে দেখি, শবনমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। শুচিস্মিতা শবনম প্রসন্নবয়ানে আমার দিকে তাকিয়ে। হায়, এই সত্য হল না কেন? আস্তে আস্তে তার চেহারা মিলিয়ে গেল কেন? এই 'বিকারে' কত দিন কেটেছিল জানি না। শবনমকে কাছে পাওয়া, তার মুখে সান্ত্বনার বাণী শোনা যদি 'বিকার' হয় তবে আমি সুস্থ হতে চাই নে।
- অধ্যায় পাঁচ, পৃ. ১৪৭, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- শত্রু বেদনা দেয় মিলনে, মিত্র দেয় বিরহে।
- অধ্যায় ছয়, পৃ. ১৪৯, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- ধর্মনিষ্ঠ অথচ বিত্তশালী এক গোস্বামীকে তাঁর স্ত্রী হঠাৎ এসে একদিন কাঁদতে কাঁদতে দুঃসংবাদ দিলেন, তাঁদের নায়েব বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁদের সর্বস্ব অপহরণ করেছে। কালই তাঁদের রাস্তায় বসতে হবে। গৃহিণীর মুখের দিকে একটুখানি তাকিয়ে গোস্বামী আবার পুঁথিপাঠে মন দিলেন। তিনি কেঁদে বললেন, 'ওগো, তুমি যে কিছুই ভাবছ না, আমাদের কি হবে।' গোস্বামী পুঁথি বন্ধ করে, হেসে বললেন, 'মুগ্ধে, আজ থেকে বিশ কিংবা ত্রিশ বৎসর পরে তুমি এই নিয়ে কান্নাকাটি করবে না। তোমার যে অভ্যাস হতে ত্রিশ বৎসর লাগবে আমি সেটা তিন মুহূর্তেই সেরে নিয়েছি।'
- অধ্যায় ছয়, পৃ. ১৫০, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- পরীর প্রেমে মানুষ পাগল হয়। পরী মানে কল্পনার জিনিস। কিংবা বলব, প্রত্যেক রমণীর ভিতরই কিছুটা পরী লুকিয়ে থাকে। সেটাকে ভালবাসলেই সর্বনাশ।
- অধ্যায় ছয়, পৃ. ১৫০, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
- সে কি আমাকে বলে যায় নি, ‘বাড়িতে থেকো, আমি ফিরব?’
- [শবনম সম্পর্কে] অধ্যায় আট, পৃ. ১৬০, ৬ষ্ঠ মুদ্রণ (২০০৮), স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা
শবনম উপন্যাস সম্পর্কে উক্তি
[সম্পাদনা]উৎসর্গপত্রে লেখক
[সম্পাদনা]অমরাত্মা রাজশেখরকে
সাহিত্যাচার্য পরম শ্রদ্ধাস্পদ রাজশেখর বসুকে এক খানা পুস্তক উৎসর্গ করিবার বাসনা আমি বহুকাল ধরিয়া মনে মনে পোষণ করিয়াছি, কিন্তু স্বরচনার মূল্য সম্বন্ধে সর্বদাই সন্দিহার থাকি বলিয়া সাহস সঞ্চয় করিতে পারি নাই। গত পৌষ তাঁহার শরীর অকম্মাৎ অত্যন্ত অসুস্থ হইয়া পড়াতে সর্ব শঙ্কাসঙ্কোচ ত্যাগ করিয়া তাঁহার দৌহিত্রের মাধ্যমে আমার মনস্কামনা পূর্ণ করিবার জন্য তাঁহার অনুমতি ভিক্ষা করি। রাজশেখর সহাদয় সজ্জন ছিলেন ~ তাঁহার সদর অনুমতি লাভ করিয়া অবিক্ষন কৃতকৃতার্থ হয়।
আজ আমার ক্ষোভ অপরিসীম বা স্বহস্তে তাঁহার চরণকমলে পুস্তিকাখানি নিবেদন করিতে পারিলাম না।
সৈয়দ মুজতবা আলী, শান্তিনিকেতন, রাখী পূর্ণিমা, ১৩৬৭
সমালোচকদের মতামত
[সম্পাদনা]- ইহা কি উপন্যাস? হঠাৎ এই প্রশ্নটি মনে উদয় হইল কেন? দেখিতেছি, ইহাতে ‘নায়ক’ (মজনূঁন), ‘নায়িকা’ (শবনম) অদৃশ্যপ্রায় ক্ষীণ-সূত্র নির্ভর একটি ঘটনা (কাবুলে বাচ্চা-ই-সাকার উত্থান-পতন) এমনকি সংলাপ (আসলে ‘প্রলাপ’) ও ট্র্যাজেডি বা বিষাদান্ত্য পরিণতি (প্রকৃতপক্ষে ‘বিরহ’) প্রভৃতি উপন্যাসসুলভ যাবতীয় বস্তু বর্তমান। তথাপি এই জাতীয় একটা অদ্ভুত প্রশ্ন মনে জাগিয়া উঠিল কেন? কারণ ঘটনাপ্রবাহসঞ্জাত চরিত্র সৃষ্টিই উপন্যাসের মূল উপাদান এবং ইহাই ইহাতে অনুপস্থিত। তবে, ইহা কি একখানি নাটক? না, তা কিছুতেই নহে। কারণ নাটকের কোন লক্ষণই ইহাতে বর্তমান নাই। তবে ‘শবনম’ কি সাহিত্যের চির অভিজাত শাখা-কাব্য? কিন্তু, ছন্দোবদ্ধ কাব্য তো ইহাতে দেখিতেছি না। কি করিয়া ইহাকে কাব্য বলিব? তথাপি মন সোল্লাসে বলিয়া উঠে, ভাবমধুর ও রসঘন বাক্যের সমাহার যদি ‘কাব্য’ নামে অভিহিত হয়- তাহা পদ্যে রচিত হউক বা গদ্যে লিখিত হউক- ‘শবনম’ নিশ্চয়ই একখানা ‘কাব্য’-না, একখানা সৃষ্টিমুখর প্রেমকাব্য।”
- বাঙালি তরুণ-তরুণীদের প্রেমে পড়ার পূর্বে অবশ্যই সৈয়দ মুজতবা আলীর শবনম উপন্যাসটি পড়ে নেয়া উচিত। এমন শিক্ষণীয় প্রেমের উপন্যাস বিশ্বসাহিত্যে আর একটিও নেই