পঞ্চতন্ত্র
অবয়ব
পঞ্চতন্ত্র সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত একটি প্রবন্ধ সংকলন যা দুটি পর্বে রচিত। কলকাতার বেঙ্গল পাবলিশার্স থেকে আষাড়, ১৩৫৯ বঙ্গাব্দে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এতে সংকলিত ৩৬টি প্রবন্ধে লেখক তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, বিদেশ ভ্রমণের স্মৃতি গ্রন্থাবদ্ধ করেছেন।
উক্তি: প্রথম পর্ব
[সম্পাদনা]বইপড়া
[সম্পাদনা]- চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত-বই পড়া, এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।
- বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয় নি। বই কেনার বাজেট যদি আপনি তিনগুণও বাড়িয়ে দেন, তবু তো আপনার দেউলে হবার সম্ভাবনা নেই। মাঝখান থেকে আপনি ফ্রাঁসের মাছির মত অনেকগুলি চোখ পেয়ে যাবেন, রাসেলের মত এক গাদা নূতন ভুবন সৃষ্টি করে ফেলবেন।
- এক ড্রইংরুম-বিহারিণী গিয়েছেন বাজারে স্বামীর জন্মদিনের জন্য সওগাত কিনতে। দোকানদার এটা দেখায়, সেটা শোকায়, এটা নাড়ে, সেটা কাড়ে, কিন্তু গরবিনী ধনীর (উভয়ার্থে) কিছুই আর মনঃপূত হয় না। সব কিছুই তাঁর স্বামীর ভাণ্ডারে রয়েছে। শেষটায় দোকানদার নিরাশ হয়ে বললে, ‘তবে একখানা ভাল বই দিলে হয় না?’ গরবিনী নাসিকা কুঞ্চিত করে বললেন, ‘সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।
কাইরো
[সম্পাদনা]- নূতন শহরের সব কিছুই গোড়ার দিকে সুর-রিয়ালিস্টিক ছবির মতো এলোপাতাড়ি ধরনের মনে হয়? অর্থ খাড়া হতে হতে কয়েকদিন কেটে যায়।
পুলিনবিহারী
[সম্পাদনা]- সমস্ত আকাশ জুড়ে ছেঁড়া ছেড়া রঙিন মেঘ-এলোমেলো, যেন আর্টিস্টের পেলেটে, এলোপাতাড়ি হেথা হোথায় এবড়ো-থেবড়ো রঙ। কিন্তু তবু সবসুদ্ধ মিলে গিয়ে যেন কেমন একটা সামঞ্জস্য রয়েছে—মনে হয় না অদলবদল করলে কিছু ফেরফার হবে।
- সূর্যোদয়ের লোহিতোজ্বল রক্ত-টিপ, দ্বিপ্রহরের অতি ঘন নীলাম্বরী, সন্ধ্যার গৈরিক পট্টবাস, সর্বশেষে অন্ধকারে সর্বস্ব ত্যাগ করে অভিসারে সিন্ধুপারে মৃদু পদসঞ্চারণ!
আহারাদি
[সম্পাদনা]- তুর্ক-পাঠান-মোগলরা যে রকম ভারতবর্ষের অলঙ্কার কারুকার্যের সঙ্গে তুর্কিস্থানী ইরানী স্থাপত্য মিলিয়ে তাজমহল বানালো, ঠিক সেইরকম ভারতীয় মশলার সঙ্গে তাদের মাংস রান্নার কায়দা মিলিয়ে এক অপূর্ব রান্নার সৃষ্টি করল।
নেতাজি
[সম্পাদনা]- আমাদের মত সাধারণ লোকের পক্ষে সুভাষচন্দ্রের মত মহাপুরুষের জীবনী আলোচনা করা অন্ধের হস্তী-দর্শনের ন্যায়। তৎসত্ত্বেও যে আমরা সুভাষচন্দ্রের জীবনী দর্শনে প্রবৃত্তি হয়েছি তার প্রধান কারণ, আমাদের মত অর্বাচীন লেখকেরা যখন মহাপুরুষকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবার জন্য ঐ একমাত্র পন্থাই খোলা পায়, তখন তার শ্রদ্ধাবেগ তাকে অন্ধত্বের চরমে পৌঁছিয়ে দেয়-শ্রদ্ধা ও ভক্তির আতিশয্যা তখন আমাদের চেয়ে সহস্ৰগুণে উত্তম লেখককেও বাচাল করে তোলে।
- বৃহত্তর আদর্শের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ ক্ষুদ্র স্বাৰ্থ ত্যাগ করেছে—তা সে ব্যক্তিগত স্বাের্থই হোক আর সাম্প্রদায়িক স্বার্থই হোক-এ তো কিছু অভূতপূর্ব জিনিস নয়। স্বীকার করি এ জিনিস বিরল।
রোগক্ষয়-শিক্ষালাভ
[সম্পাদনা]- মানুষ যেমন বিষের ধুঁয়ো এটম বম বানিয়ে তার আপন ভাইকে অসহ্য যন্ত্রণা দিয়ে মারতে শিখেছে—ঠিক তেমনি এমন মানুষেরও অভাব নেই যাঁরা মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য সমস্ত কল্পনাশক্তি, সর্বশেষ রক্তবিন্দু ক্ষয় করতে প্ৰস্তুত আছেন।
ইস্কিলাস-শেলি-স্পিটলার
[সম্পাদনা]- চেঙ্গিস নাদির আট্টিলা আসত দুদিনের তরে; কিন্তু এখন যে পাদ্রী কামান রাজপুরুষ বণিক পুলিশ আসতে লাগল তার আর অন্ত নেই। তাদের শোষণ দিনযামিনী, সায়ং প্রাতঃ, শিশির বসন্তু, যুগ যুগ ধরে।
অনুবাদ-সাহিত্য
[সম্পাদনা]- বাঙলা সাহিত্যের মত অদ্ভুত এবং বেতালা সাহিত্য পৃথিবীতে কমই আছে।
কালচর
[সম্পাদনা]- এই মাগ্গীর বাজারে প্রেমের চেয়ে চাকরি বড়। প্রাণ জিনিসটা জন্মে জন্মে বিনা খরচে, বিনা মেহন্নতে পাওয়া যায়; কিন্তু চাকরির জন্য বিস্তর বেদরদ বেইজাতী সইতে হয়।
- ‘কলচরড’ নই, তাই বলতে পারব না, ‘কলচর’ দেশ-কাল-পাত্র মেনে নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত হয় কি না।
বর্ষা
[সম্পাদনা]- ‘ওরে মুখের দল, জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য বিরহী। আর বিরহ করে কয়, সে-কথা কি করে জানবি মেঘ না জমলে, বৃষ্টি না ঝরলো? আর শেষ তত্ত্বকথা কবিতা কি করে ওৎরাবে বিরহবেদনা যদি মানুষকে পাগল করে না তোলে?’
- আজও ভাবি, আমাদের পদাবলী, জয়দেব, কালিদাস, শূদ্ৰক যে বিরহ বর্ণনা রেখে গিয়েছেন তার সঙ্গে তো অন্য কোন সাহিত্যের বিরহ বর্ণনার তুলনা হয় না। তার একমাত্র কারণ আমাদের বর্ষা।
আজব শহর কলকেতা
[সম্পাদনা]- তুলসীদাস বলেছেন—’পৃথিবীর কি অদ্ভুত রীতি। শুড়ি-দোকানে জেঁকে বসে থাকে আর দুনিয়ার লোক তার দোকানে গিয়ে মদ কেনে। ওদিকে দেখ, দুধওয়ালাকে ঘরে ঘরে ধন্না দিয়ে দুধ বেচতে হয়।’
কিসের সন্ধানে
[সম্পাদনা]- ইংরেজ শাসনের ফলে আমরা প্রায় হটেনটটর পর্যায়ভুক্ত হয়ে পড়েছিলুম। আর কয়েকটি বৎসর মাত্র ইংরেজ এদেশে থাকলে আমরা একে অন্যকে কাঁচা খেয়ে ফেলতে আরম্ভ করতুম।
- আজ পর্যন্ত যেটুকু এদেশে এসেছে তাকেই আমরা সামলে উঠতে পারছি নে। আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের শিক্ষার সঙ্গে তাকে কি করে মিল খাওয়াবো, বুঝে উঠতে পারিনে। অথচ পশ্চিমের সঙ্গে লেন-দেনও তো বন্ধ করে দেওয়া যায় না। উপায় কি?
ভক্তি
[সম্পাদনা]- কিন্তু মানুষ একবার ভালবাসার মন্ত্র পেলে সে আর মাটির মানুষ হয়ে থাকতে চায় না। মুক্তপক্ষ বিস্তার করে সে আকাশের সর্বোচ্চ স্তরে উড্ডীয়মান হতে চায়।
আমার ভাণ্ডার আছে ভরে
[সম্পাদনা]- শব্দপ্রাচুর্যের উপর ভাষার শক্তি নির্ভর করে। ইংরেজি এবং বাংলা এই উভয় ভাষা নিয়ে যাদের একটুখানি ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়, তারাই জানেন বাঙলার শব্দ-সম্পদ কত সীমাবদ্ধ।
- তাই বলি বাঙলা ভাষা লক্ষ্মীছাড়া’, ‘হতভাগা’ নয়! শুধু হাতির মত আমরা নিজেদের তাগাদ জানি নে।
সিনিয়র অ্যাপ্রেনটিস
[সম্পাদনা]- কোনো কোনো ধর্মগ্রন্থ যত পুরনো হয় তাদের কদর ততই বেড়ে যায়। নতুন যুগের লোক সে সব গ্ৰন্থ থেকে নতুন সমস্যার অতি প্রাচীন এবং চিরন্তন সমাধান পায় বলে তারা সব কেতাবকে অনায়াসে হার মানায়।
- ১৯৪৭ সালে স্বরাজ লাভ হয়। আমাদের এপ্রেনটিসি তখন শুরু হয়। তখনো পরনে ধুতি ছিল, গায়ে জামা ছিল। আর আমাদের সিনিয়র এপ্রেনটিস হওয়ার বেশি বাকি নেই। সবই আল্লার কেরামতী।
তোতা কাহিনী
[সম্পাদনা]- পারস্য দেশের গুণী-জ্ঞানীরা বলেন, আল্লা যদি আরবী ভাষায় কোরান প্ৰকাশ না করে ফার্সিতে করতেন, তবে মৌলানা জালালউদ্দীন রুমীর ‘মসনবি’ কেতাবখানাকে কোরান নাম দিয়ে চালিয়ে দিতেন। এ ধরনের তারিফ আর কোন দেশের লোক তাদের কবির জন্য করেছে বলে তো আমার জানা নেই।
চরিত্র পরিচয়
[সম্পাদনা]- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগার খবর শুনে এক বুড়ো শিখ মেজর জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে কার বিরুদ্ধে লড়ছে?’
‘ইংরেজ-ফরাসি জর্মনির বিরুদ্ধে।’ সর্দারাজী আপসোস করে বললেন, ফরাসি হারলে দুনিয়া থেকে সৌন্দর্যের চর্চা উঠে যাবে আর জর্মনি হারলেও বুরি বাৎ, কারণ জ্ঞানবিজ্ঞান কলাকৌশল মারা যাবে।’ কিন্তু ইংরেজরা হারা সম্বন্ধে সর্দারাজী চুপ। আর যদি ইংরেজ হারে?’ সর্দারাজী দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘তবে দুনিয়া থেকে বেইমানি লোপ পেয়ে যাবে।’
ধূপ-ছায়া
[সম্পাদনা]- নিতান্ত বিপদে পড়লে তবু বরঞ্চ কোনো পুরুষের শরণাপন্ন হওয়া যায়। কিন্তু স্ত্রীলোক?-নৈব নৈব চ। বুঝলুম, আমাদের দেশে ভুল বলে না, বরঞ্চ যমের হাতে স্বামীকে তুলে দেব। তবু সতীনের কোলে নয়।’ এস্থলে বরঞ্চ অপরিচিত, অর্ধপরিচিত হুলোর সাহায্য কবুল, তবু কোনো মেনির ছায়া মাড়াব না।
উক্তি: দ্বিতীয় পর্ব
[সম্পাদনা]কচ্ছের রান
[সম্পাদনা]- ইতিহাস নিজেকে মাঝে মাঝে পুনরাবৃত্তি করে। চোখের সামনে যখন তাই কোনও কিছু একটা ঘটে, তখন স্মৃতিপথে আসে প্রাচীন দিনের ওইরকম কোনও একটি ঘটনা।
- অনেকেই অনেক কিছু চড়ে স্বর্গে যান; ঐরাবত, পুষ্পকরথ, কত কী? শাহ-ইন-শাহ বাদশা-সালামৎ মুহম্মদ তুগলুক শাহ ইলিশ চড়ে স্বর্গে গেলেন। স্বর্গে যাবেন না তো কোথায় যাবেন? ইলিশ খেয়ে যে প্রাণ দেয় সে তো শহিদ–মার্টার!
দর্শনাতীত
[সম্পাদনা]- আমার ব্যক্তিগত সংস্কার যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে পৃথিবী নামক জায়গাটিতে একবারের বেশি দু বার পাঠান না। একই নিষ্ঠুর স্থলে একাধিকবার পাঠিয়ে একই দণ্ড দেওয়ার মধ্যে কোনও বৈদগ্ধ্য (রিফাইনমেন্ট) নেই।
বাবুর শাহ=
[সম্পাদনা]- আজকের দিনের বাঙালি ইনফ্লেশন কারে কয়, সেটা চোখের জলে নাকের জলে শিখেছে। রোক্কা একটি টাকার ক্রয়মূল্য আজ কতখানি, সে তা বিলক্ষণ জানে।
ফোর্ডিনান্ট জাওয়ারব্রুখ
[সম্পাদনা]- বিশুদ্ধ হাস্যরস যেটা সৃষ্টি করার জন্য কাউকে পীড়া দিতে হয় না, নট অ্যাট দি কসট অব এনি ওয়ান– আপনার আনন্দে উচ্ছল এবং সেটা ব্যঙ্গরসের বহু পরবর্তী যুগের রস। এবং আমার ব্যক্তিগত শাবাসি সেই হাস্যরসের, সেই ব্যঙ্গরসের উদ্দেশে যেখানে রসস্রষ্টা নিজেকে নিয়ে নিজে হাসেন, নিজেকে ব্যঙ্গ করেন, লাফট অ্যাট হিজ ওন কষ্ট।
হিডজিভাই পি মরিস
[সম্পাদনা]- হিন্দি কবি সত্যি বলেছেন, গুরু তো লাখে লাখে, উত্তম চেলা কই। আশ্রমের ছেলেবুড়ো এখন সবাই সায়েবের শুরু।
‘আধুনিক’ কবিতা
[সম্পাদনা]- আপনি জানেন প্রাক-পয়গম্বর যুগেও আরবদের ছিল বহু বিচিত্র ছন্দে, মিলের কঠোরতম আইনে বাঁধা অত্যুকৃষ্ট কাব্যসৃষ্টি। গদ্য ছিল না, কিংবা প্রায় না থাকারই মতো। তথাপি আল্লা-তালা। পয়গম্বরকে যে কুরানের বাণী পাঠালেন সে তো গদ্যে। অথচ আরবি-ভাষা নিয়ে যারা সামান্যতম চর্চা করেছেন তারাই শপথ করে বললেন, এঁর ছন্দোময় গদ্য যে কোনও বাধা কাব্যকে হার মানায়। পয়গম্বরকে যখনই তাঁর বিরুদ্ধপক্ষ কোনও মিরাকল (অলৌকিক কীর্তি) দেখাতে আহ্বান করত তখনই তিনি সবিনয়ে বলতেন, ‘আমি নিরক্ষর আরব। তৎসত্ত্বেও আল্লা-তালা আমার কণ্ঠ দিয়ে যে কুরান পাঠালেন তার কাছে কি আসতে পারে তোমাদের শ্রেষ্ঠতম কাব্য? এইটেই হল সবচেয়ে বড় মিরাকল।’
মূর্খের উপাসনা অপেক্ষা পণ্ডিতের নিদ্রা শ্রেয়ঃ
[সম্পাদনা]- যতক্ষণ অবধি পণ্ডিত-মৌলবি-মৌলানা-রাব্বি-ফাদার-দস্তুর সুদ্ধমাত্র প্র্যাকটিকাল বিষয়ে মত্ত হবেন না, ততদিন মহাপ্রলয় আসবে না।
পঞ্চাশ বছর ধরে করেছি সাধনা
[সম্পাদনা]- প্যারিসে একবার একটি উদ্ধৃষ্ট সঙ্গীতানুষ্ঠান কর্তাদের নেকনজর পায়নি শুনে ভলতেয়ার সেই সঙ্গীতস্রষ্টাকে একটি চৌপদী লিখে সান্ত্বনা জানান, হায়, বড়লোকদের যে কানও বড় হয়’ (অর্থাৎ গাধা)।
ইন্টারভ্যু
[সম্পাদনা]- ইন্টারভ্যু শেষে লাঞ্চ। সরকারি লাঞ্চকে আমি বলি লাঞ্ছনা। অবশ্য সর্বোচ্চ মহলে নয়। সেখানে লাঞ্চের অজুহাতে আপনার জন্য পেলেটে করে রোলস-রইস গাড়ি আসতে পারে তন্বঙ্গী পরী-পয়করী চালিতা। ড্রাইভারিণীটি ফাউ, থ্রোন ইন্ ফর গুড মেঝার!
অদ্যাপিও সেই খেলা খেলে গোরা রায় মধ্যে মধ্যে ভাগ্যবানে দেখিবার পায়
[সম্পাদনা]- সাত শ বছর আরবি-ফার্সির কঠিন একনিষ্ঠ সাধনা করে ভারতীয় মৌলবিরা জ্ঞানবিজ্ঞান ধর্মচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন সত্য, কিন্তু আরবি দূরে থাক, ফার্সি সাহিত্যেও কোনও কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। তার একমাত্র কারণ মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য কোনও ভাষায় সাহিত্যের কুবৃমিনার গড়া অসম্ভব।
আধুনিকা
[সম্পাদনা]- ত্রিশ বছর আগেকার কথা। তখনও এদেশে ‘পেট-কাটা’ ‘নখরাঙানো’ মডার্নিদের আবির্ভাব হয়নি, এ তো জানা কথা, কিন্তু ‘মর্ডান’ মেয়ে সর্বযুগে সর্বদেশেই থাকে। আমার মনে হত, সে যুগের মডার্নতম দেখা যেত চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ-গোয়ালন্দি জাহাজে।
চোখের জলের লেখক
[সম্পাদনা]- হাসি একে অন্যের কাছ থেকে দূরে নিয়ে যায়, কান্না কাছে টেনে আনে।
ছাত্র বনাম পুলিশ
[সম্পাদনা]- হাসি পায় যখন এদেশে শুনি, এখানে বড্ড বেশি মুখস্থ করানো হয়, মুখস্থ না করে কে কবে কোন দেশে কোন পরীক্ষা পাশ করেছে!
রাসপুতিন
[সম্পাদনা]- ভগবান যে হঠাৎ খামোখা এহেন দুরারোগ্য ব্যাধি শুধু বড়লোকদের জন্যই রিজার্ভ করে রেখে দেবেন, এটা তো অকল্পনীয়। ব্যামোগুলো তো আমাদের মতন গরিবদের জন্যই তৈরি হয়েছে। ভগবান স্বয়ং তো রাজাদের দলে। কিংডম অব দি হেভেন বা স্বর্গরাজ্যে যাঁরা বাস করে, তিনি তো ফেভার করবেন তাঁর জাতভাই তাঁদেরই, যাঁদের কিংডম্ অব দি আর্থ বা পৃথ্বীরাজ্য আছে।
বিষ্ণুশর্মা
[সম্পাদনা]- প্রাচীন ইরানের সঙ্গে প্রাচীন গ্রিস-রোমের সম্পর্ক বহুকালের। কখনও যুদ্ধের মারফতে, কখনও শান্তির। শান্তির সময় উভয়ে একে অন্যের ওপর সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তার করেছে।
রবি-মোহন-এন্ড্রুজ
[সম্পাদনা]- হাসি পায় কান্নাও পায়– তখন আমরা কী naif (প্রায় ‘ন্যাকার’ মতো)-ই না ছিলুম, যে বিশ্বাস করতুম– স্বরাজ পাওয়ার পরই ‘পাঁচ আঙুল ঘিয়ে’ আর ‘ডেগ-এর ভিতর গর্দান ঢুকিয়ে ভোজন’!
তাই কি রবীন্দ্রনাথ সাবধানবাণী বলেছিলেন, (উদ্ধতিতে ভুল থাকলে ক্ষমা চাইছি) ‘একদিন (স্বরাজ লাভের পর) যেন না বলতে হয়, ইংরেজই ছিল ভালো!’
এমেচার ভার্সেস স্পেশালিস্ট
[সম্পাদনা]- সাহিত্যিকের সঙ্গে ভাষার যে-পরিচয় হয় সেটা আদৌ শব্দতাত্ত্বিক বা ভাষাতাত্ত্বিকের মতো নয়। সে-ভাষা ব্যবহার করে নতুন নতুন সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে। তাই তার ভাষা সদা পরিবর্তনশীল।
- সবাই তাকিয়ে আছেন কোষকারের দিকে। সে পরিভাষা বানিয়ে দেবে। আর সে বেচারি তাকিয়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, চিকিৎসা, আইন ইত্যাদির পণ্ডিতদের দিকে। তাঁরা সংজ্ঞা দেবেন এবং তাঁদের অধিকাংশই শব্দ বা ভাষাতাত্ত্বিক নন, সে বাবদে নিতান্তই এমেচার–তবে তো কোষকার সেগুলো লিপিবদ্ধ করবে
ভাষা
[সম্পাদনা]- আমরা যখন সাধারণের কোনও অজানা ভাষা থেকে উদ্ধৃতি দিই, তখন বাংলা অনুবাদটি দিই তার পরে। তাই আমরা যদি ইংরেজি প্রবন্ধে সংস্কৃত বা বাংলা উদ্ধৃতি দিই তবে ইংরেজি অনুবাদটি দিই পরে। অর্থাৎ যাকে বোঝাতে যাচ্ছি, তার ভাষা আসে পরে।