শবনম (উপন্যাস)

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
(শবনম --প্রণয় উপন্যাস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শবনম সৈয়দ মুজতবা আলী ( ১৩ই সেপ্টেম্বর ১৯০৪ - ১১ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৪ ) রচিত এক অসাধারণ প্রেম-উপখ্যান যা ১৯৬০ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তরুণ বাঙালি যুবকের সাথে এক ধনী পরিবারের কন্যার প্রেমকাহিনী এই উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখার মৌলিক কাব্যিক ঢঙ ও বিদেশী সাহিত্যিক শব্দাবলীর প্রয়োগ কাহিনীকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। মজনুন (নায়ক) ও শবনম(নায়িকা) তাদের মান,অভিমান,খুনসুটি,মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা হাজারো কথা কাব্যে কাব্যে প্রকাশ করেছে। ঔপন্যাসিক বেশকিছু ফার্সি কবিতার অনুবাদ প্রয়োগ করেছেন যা এই উপন্যাসকে প্রেমকাব্যে পরিণত করেছে।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • আমি তব সাথী
    হে শেফালী, শরৎ-নিশির স্বপ্ন, শিশির সঞ্চিত
    প্রভাতের বিচ্ছেদ বেদনা।


[ঔপন্যাসিক এর ব্যাখ্যায় বলেন,শরৎ-নিশি সমস্ত রাত স্বপ্ন দেখেছে শিউলি ফোটাবার -আর ভোর হতেই গাছকে বিচ্ছেদ-বেদনা দিয়ে ঝরে পড়ল সেই শিউলি ]


  • কানে কানে কহি তোরে
    বধূরে যেদিন পাবো, ডাকিব হিমিকা নাম ধরে।


  • কাজল যতক্ষণ দূরে থাকে ততক্ষন তার বিরুদ্ধে ফরিয়াদ-সে কালো।চোখে যখন মেখে নিই-তখন তো তার কালিমা আর দেখতে পাই নে। সে তখন সৌন্দর্য বাড়ায়। (পন্ডিত তিরুবল্লুবের)


  • হে সৌভাগ্যবান মুক্তা, তুমি একবার মাত্র লৌহশলাকায় বিদ্ধ হয়ে তারপর থেকেই প্রিয়ার বক্ষ-দেশে বিরাজ করছ;আর আমি মন্দভাগ্য শতবার বিরহশলাকায় সচ্ছিদ্র হয়েও সেখানে স্থান পাইনে।(কালিদাস)



  • একটি কথা, দুটি চাউনি, তাতেই দেহের ক্ষুদা, হৃদয়ের তৃষ্ণা, মনের আকাঙ্খা সব ঘুচে যায়, সব পরিপূর্ণ হয়ে যায়!


  • এ যেন - বেলাভূমির সঙ্গে তরঙ্গের প্রেম। দূর থেকে সাদা দাঁত দেখিয়ে হেসে হেসে আসে, আবার চোলে যায়,, আবার আসে, আবার যায়।
  • এক দোর বন্ধ হলে দশ দোর খুলে যায়;বোবার এক মুখ বন্ধ হলে দশ আঙুল তার ভাষা তর্জমা করে দেয়।


  • অনাদৃতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কোনো কোনো মেয়ের স্বভাব।


  • নববধূকে জবড়জঙ্গ করে সাজানোতে একটা গভীর তত্ত্ব রয়েছে। রূপহীনার দৈন্য তখন এমনই চাপা পড়ে যায় যে সহৃদয় লোক ভাবে,'আহা, একে যদি সরল-সহজভাবে সাজানো হতো তবে মিষ্টি দেখাতো ; আর সুরূপার বেলায়ও ভাবে ওই একই কথা -না সাজালে তাকে আরও অনেক বেশি সুন্দর দেখাতো!


  • মজনুর শেষ প্রাণ-নিঃশ্বাস করে লীন ধরাতলে
    সেই নিঃশ্বাস ঘূর্ণির রূপে লায়লিকে খুঁজে চলে।

[ঔপন্যাসিক এর ব্যাখ্যায় বলেন,মজনু যখন-ই শুনত,তার প্রিয়া লায়লিকে নজদ মরুভূমির উপর দিয়ে উটে করে সরানো হচ্ছে সে তখন পাগলের মতো এ-উট সে-উট এর কাছে গিয়ে খুঁজত কোন মহমিল (উটের হাওদা ) লায়লি আছে। মজনু মরে গেছেন কত শতাব্দী হল। কিন্তু এখনও তার জীবিতবস্থার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মরুভূমির ছোট ছোট ঘূর্ণিবায়ু হয়ে লায়লির মহমিল খুঁজছে।]


  • হয়তো তোমারে সে পরশ করি'আসি,
    হে প্রিয়া মনে মনে ভাবিয়া তাই
    সকল অঙ্গেতে সে বায়ু মাখি লয়ে
    পরশ তব যেন তাহাতে পাই।

[ঔপন্যাসিক এর ব্যাখ্যায় বলেন,কোথায় রামগিরি আর কোথায় অলকা-কোথায় নাগপুর আর কোথায় কৈলাস-সেই রামগিরিশিখরে দাঁড়িয়ে বিরহী যক্ষ দক্ষিণগামী বাতাসকে আলিঙ্গন করেছিলেন। সেই বাতাসে হিমালয়ের দেবদারু গাছের গন্ধ পেয়ে ভেবেছিলেন, হয়তো এই বাতাসই তার অলকাবাসী প্রিয়াঙ্গীর সর্বাঙ্গ চুম্বন করে এসেছে।]


  • জাগিনু যখন উষা হাসে নাই
    শুধানু 'সে আসিবে কি?'
    চলে যায় সাঁঝ, আর আশা নাই
    সে তো আসিল না, হায়, সখি!
    নিশীথ রাতে ক্ষুব্ধ হৃদয়ে
    জাগিয়া লুটায় বিছানায়;
    আপন রচন ব্যর্থ স্বপন
    দুখ ভারে নুয়ে পড়ে যায়।


  • আমার মিলনে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না
    আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না

শবনম --প্রণয় উপন্যাস সম্পর্কে উক্তি[সম্পাদনা]

  • “ইহা কি উপন্যাস? হঠাৎ এই প্রশ্নটি মনে উদয় হইল কেন? দেখিতেছি, ইহাতে ‘নায়ক’ (মজনূঁন), ‘নায়িকা’ (শবনম) অদৃশ্যপ্রায় ক্ষীণ-সূত্র নির্ভর একটি ঘটনা (কাবুলে বাচ্চা-ই-সাকার উত্থান-পতন) এমনকি সংলাপ (আসলে ‘প্রলাপ’) ও ট্র্যাজেডি বা বিষাদান্ত্য পরিণতি (প্রকৃতপক্ষে ‘বিরহ’) প্রভৃতি উপন্যাসসুলভ যাবতীয় বস্তু বর্তমান। তথাপি এই জাতীয় একটা অদ্ভুত প্রশ্ন মনে জাগিয়া উঠিল কেন? কারণ ঘটনাপ্রবাহসঞ্জাত চরিত্র সৃষ্টিই উপন্যাসের মূল উপাদান এবং ইহাই ইহাতে অনুপস্থিত। তবে, ইহা কি একখানি নাটক? না, তা কিছুতেই নহে। কারণ নাটকের কোন লক্ষণই ইহাতে বর্তমান নাই। তবে ‘শবনম’ কি সাহিত্যের চির অভিজাত শাখা-কাব্য? কিন্তু, ছন্দোবদ্ধ কাব্য তো ইহাতে দেখিতেছি না। কি করিয়া ইহাকে কাব্য বলিব? তথাপি মন সোল্লাসে বলিয়া উঠে, ভাবমধুর ও রসঘন বাক্যের সমাহার যদি ‘কাব্য’ নামে অভিহিত হয়- তাহা পদ্যে রচিত হউক বা গদ্যে লিখিত হউক- ‘শবনম’ নিশ্চয়ই একখানা ‘কাব্য’-না, একখানা সৃষ্টিমুখর প্রেমকাব্য।”
    • ড. মুহম্মদ এনামুল হক (২০ সেপ্টেম্বর ১৯০২ – ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২)বাঙালি শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ ও সাহিত্যিক।


  • “বাঙ্গালী তরুন-তরুনীদের প্রেমে পড়ার পূর্বে অবশ্যই সৈয়দ মুজতবা আলীর শবনম উপন্যাসটি পড়ে নেয়া উচিত। এমন শিক্ষণীয় প্রেমের উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যে আর একটিও নেই
    • আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (জন্ম ২৫ জুলাই ১৯৪০), বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

https://www.goodreads.com/bn/book/show/15853577