বিষয়বস্তুতে চলুন

বাঙালি জাতীয়তাবাদ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
সর্ব-বাংলা লাল-সাদা রঙে লেখা "জয় বাংলা"। এটি এক স্লোগান, যা বঙ্গবঙ্গমাতার জন্য জাতীয়তাবাদকে ইঙ্গিত করে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা বাঙালিয়ানা হলো এক রাজনৈতিক অভিব্যক্তি বা জাতীয়তাবাদ যার মাধ্যমে প্রাচীন কাল থেকে দক্ষিণ এশিয়াতে বসবাসরত বাঙালি জাতি, তথা বাংলা ভাষাগত অঞ্চলের অধিবাসীদের বুঝানো হয়ে থাকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয় ৪০ এর দশকে লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে দিয়ে। ৫২'এর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যের বাঙালি জাতীয়তাবাদ দৃঢ় ও সমৃদ্ধ হয়। ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাতৃভাষা রক্ষার্থে আন্দোলন/সংগ্রাম শুরু কর। বাঙালিরা মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বসবাস করে। বাংলাদেশের সংবিধানের আসল সংস্করণের চারটি মূল স্তম্ভের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ অন্যতম যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করছে।

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে দিল্লীর শিরঃপীড়ার কারণ আমি আগেই উল্লেখ করেছি। তারা ভয় করেছিলেন সেক্যুলার ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা রাজ্যসহ সকল বাংলা ভাষাভাষী এলাকায় এই জাতীয়তাবাদের ঢেই গিয়ে পৌঁছাবে এবং অবশিষ্ট অখণ্ড ভারতের ঐক্যেও চিড় ধরাবে।...তারা চাচ্ছিলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলে একটি দুর্বল মুসলিম স্টেট প্রতিবেশী হিসেবে থাকুক, যে রাষ্ট্রের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরার অমুসলিম বাঙালিরা কোনো অনুরাগ বা আনুগত্য পোষণ করবে না; বরং মুসলিম জাতীয়তা ও মুসলিম গরিষ্ঠতার সঙ্গে যুক্ত হতে তারা ভয় পাবে; পাকিস্তানী শাসনামলের কথা স্মরণ করবে।
  • সংবিধানে নিজের জনসাধারণকে 'বাঙালী' হিসেবে আখ্যা দিয়ে শেখ মুজিব ৭২ সালে দিল্লীর বিরক্তির কারণ হয়েছিলেন। ভারতীয়দের মনে হয়েছিলো, "বাঙালী জাতীয়তাবাদ” এর এই আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী ভবিষ্যতে কোনো এক সময় তাদের "পশ্চিমবঙ্গ” রাজ্য নিয়েও অযাচিত ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে। তাই জিয়া কর্তৃক 'বাংলাদেশী' নামকরণের ব্যাপারটি তাদের কাছে স্বাদরে গৃহীত হয়েছিলো এবং সংবিধানের ইসলামিকরণের প্রচেষ্টাকে এর ভারসাম্য হিসেবে তাদেরকে মেনে নিতে সাহায্য করেছিলো।
    • এন্থনি মাস্কারেনহাস। Bangladesh: A legacy of blood, পৃষ্ঠা ১২৫
  • খণ্ডিত বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে দুই বাংলায় মিলন ঘটাতে হবে এবং খণ্ডিত বাঙালি সংস্কৃতিকেও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
  • জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অসম মরণ সংগ্রামে। জাতীয়তাবাদ না হলে কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। ... এই যে জাতীয়তাবাদ, সে সম্পর্কে আমি একটা কথা বলতে চাই। ভাষাই বলুন, শিক্ষাই বলুন, সভ্যতাই বলুন আর কৃষ্টিই বলুন, সকলের সাথে একটা জিনিস রয়েছে, সেটা হলো অনুভূতি। ... অনেক দেশ আছে একই ভাষা, একই ধর্ম, একই সবকিছু, কিন্তু সেখানে বিভিন্ন জাতি গড়ে উঠেছে, তারা একটি জাতিতে পরিণত হতে পারে নাই। জাতীয়তাবাদ নির্ভর করে অনুভূতির ওপর। আজ বাঙ্গালি জাতি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, এই সংগ্রাম হয়েছিল যার ওপর ভিত্তি করে সেই অনুভূতি আছে বলেই আজকে আমি বাঙালি, আমার বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
    • গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রদত্ত ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বরের ভাষণ।
  • আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি।এটি কোনো আদর্শের কথা নয়; এটি একটি বাস্তব সত্য। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]