কাঠ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
ঐ চলেছে গরুর গাড়ি মাঠের পাশে,
কাঠের চাকায় ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর শব্দ আসে।
সুনির্মল বসু

কাঠ বা কাষ্ঠ মূলত গাছের অভ্যন্তরীণ অংশ যা সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, পেকটিন প্রভৃতি জৈব পদার্থ দ্বারা গঠিত। সেই আদিম যুগ থেকে মানুষ কাঠকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করেতে শিখেছে। তাছাড়া ঘরবাড়ি, নৌকা, আসবাবপত্র, কাগজ প্রভৃতি কাজে কাঠ ব্যাপকভাবে অনেককাল আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • কাঠ যে মানুষের কাজের পক্ষে কত বড়ো দরকারি জিনিস, তা একবার ভেবে দেখেছ কি? এখন নাহয় সভ্য মানুষে কয়লা, কেরোসিন, গ্যাস বা ইলেকট্রিক চুল্লির ব্যবহার শিখেছে। কিন্তু তার আগে তো জ্বালানি কাঠ না হলে মানুষের রান্নাবান্না কলকারখানা কিছুই চলত না, শীতের দেশে মানুষের বেঁচে থাকাই দায় হত। এই তো কিছুকাল আগেও কাঠের জাহাজ না হলে মানুষে সমুদ্রে যেতে পারত না, কাঠের কড়ি বরগা থাম না হলে তার ঘর বাড়ি তৈরি হত না।
    • সুকুমার রায়, কাঠের কথা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭২
  • বনের ভিতরে এক জায়গায় করাতীরা করাত দিয়ে কাঠ চিরত। একটা মস্ত কাঠ আধখানা চিরে রেখে, সেইখানে গোঁজ মেরে করাতীরা চলে গিয়েছে। এই সময় বাঘ বনের ভিতর এসে দেখে শিয়াল সেই আধচেরা কাঠখানার উপরে বসে বিশ্রাম করছে।
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বোকা বাঘ, টুনটুনির বই- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, প্রকাশক- দেব সাহিত্য কুটীর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৭১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৭-৮৮
  • এক বৃদ্ধ অতি দুঃখী ছিল। তাহার জীবিকা নির্ব্বাহের কোনও উপায় ছিল না। সে, বনে কাঠ কাটিয়া, সেই কাঠ বেচিয়া, অতি কষ্টে দিনপাত করিত। গ্রীষ্ম কালে, এক দিন, মধ্যাহ্ন সময়ে, সে, কাঠের বোঝা মাথায় করিয়া, বন হইতে আসিতেছে। ক্ষুধায় পেট জলিতেছে; তৃষ্ণায় ছাতি ফাটিতেছে; প্রখর রৌদ্রে সর্ব্ব শরীর দগ্ধপ্রায় ও গলদঘর্ম হইতেছে; পথের তপ্ত ধূলি ও বালুকাতে, দুই পা পুড়িয়া যাইতেছে। অবশেষে, নিতান্ত ক্লান্ত হইয়া, কাঠের বোঝা ফেলিয়া, সে এক বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম করিতে বসিল।
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দুঃখী বৃদ্ধ ও যম, কথামালা- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, চতুশ্চত্বারিংশ সংস্করণ, প্রকাশক- সংস্কৃত প্রেস ডিপোজিটরি, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৯-৭০
  • যে বালকের মাটির পুতুল আছে সে আর-একটি বালকের কাঠের পুতুল দেখে প্রথমতঃ তার নিজের কাঠের পুতুল নেই বলে কাঁদতে বসে; এই রকমে তার নিজের পুতুলের ওপর যখন একবার বৈরাগ্য জন্মায় তখন সেই কাঠের পুতুলের কানে একটা মাকড়ি দেখে তার খুঁতখুঁৎ দ্বিগুণ বেড়ে ওঠে; তখন বিবেচনা করে না যে, সেই কাঠের পুতুলের কানে যেমন একটা মাকড়ি আছে তেমনি তার মাটির পুতুলের গলায় একটা হার আছে।
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পঞ্চম পত্র, য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রকাশক- বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ (১৩৯৩ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৬৭
  • আমাদের দেশের লেখক দিগকে আমি তেঁতুল বলিয়া গণি। নিজের সম্পত্তি খোলা আর সিটে, কিন্তু দুগ্ধকেও স্পর্শ করিলে দধি করিয়া তোলেন। গুণের মধ্যে কেবল অম্লগুণ—তাও নিকৃষ্ট অম্ল। তবে এক গুণ মানি—ইঁহারা সাক্ষাৎ কাষ্ঠাবতার। তেঁতুল কাঠ নীরস বটে, কিন্তু সমালোচনার আগুনে পোড়েন ভাল।
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মনুষ্য ফল, কমলাকান্ত - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্বিতীয় সংখ্যা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৪
  • চমকি পাথর ঠুকিয়া বা কাঠে কাঠে ঘষিয়া সেই যে কোন কালের আদিম মানুষ আগুন জ্বালাইবার উপায় বাহির করিয়াছিল, আজও পৃথিবীর কত অসভ্য জাতি ঠিক সেই উপায়ে প্রতিদিন আগুন জ্বালিতেছ। এই কাজ করিতে কৌশল ও পরিশ্রম দুয়েরই দরকার হয়। কাঠের মধ্যে কাঠ ঘুরাইয়া আগুন জ্বালিবার প্রথা আমাদের দেশে বহুকাল হইতে প্রচলিত ছিল-বেদে এবং পুরাণে তার কথা অনেক স্থানে দেখিতে পাওয়া যায়। প্রত্যেকবার এইভাবে আগুন জ্বালানো বড়ো সহজ কথা নয়, সেইজন্য একবার আগুন জ্বালানো হইলে তাহাতে বার বার কাঠ-কুটা শুকনা পাতা ইত্যাদি দিয়া সেই আগুনকে বাঁচাইয়া রাখা দরকার হইত।
    • সুকুমার রায়, আগুন, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৩০-২৩১
  • ঐ চলেছে গরুর গাড়ি মাঠের পাশে,
    কাঠের চাকায় ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর শব্দ আসে।
    • সুনির্মল বসু, গরুর গাড়ির গান, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪
  • বৃদ্ধ ও যুবকদিগের নৃত্যগীত ভোজের স্বতন্ত্র দুইটি স্থান নির্দ্দিষ্ট হইয়াছে, দুইটি নির্দ্দিষ্ট চক্রের মধ্যে শুষ্ক কাষ্ঠরাশির দুইটি আগুণ ধূ ধূ করিয়া জ্বলিতেছে, তাহার চারিপাশে লোক জমা হইয়া মেয়ে পুরুষে মিলিয়া উনুন খুড়িতেছে, শীকার কাটিতেছে, বাটনা বাটিতেছে, মাদল পিটিতেছে, গল্প করিতেছে, হাসিতেছে, চীৎকার করিতেছে, আর হাসিতে হাসিতে গল্প করিতে করিতে মাঝে মাঝে অগ্নি কুণ্ডে শুষ্ক কাঠ ঠেলিয়া দিতেছে ও নূতন কাঠ কাটিয়া আনিয়া জমা করিবার জন্য তম্বি করিতেছে। যাহারা কাঠ আনিতে উঠিতেছে তাহারা দু এক পা গিয়া দু একটা মাদল টানিয়া লইয়া পিটিতে পিটিতে গান লাগাইয়া দিতেছে অবশেষে মেয়েদের চেঁচানির জ্বালায় মাদল গুলা ফেলিয়া চোঁচা দৌড় মারিতেছে।
    • স্বর্ণকুমারী দেবী, মিবাররাজ, পঞ্চম পরিচ্ছেদ, মিবাররাজ-স্বর্ণকুমারী দেবী, মুদ্রক- আদি ব্রাহ্মসমাজ যন্ত্র, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ (১২৯৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১২-১৩
  • দুইদিনে সব কাঠ চেরা হইয়া গেলে, তক্তাগুলি পাট করিয়া রাখিয়া পারিশ্রমিক লইয়া করাতীরা বিদায় হইল, আর রমুর বয়সের ছেলেমেয়েরা একগাদা করাতের গুঁড়ায় দাপাদাপি করিয়া খেলায় মাতিয়া গেল।
    • অদ্বৈত মল্লবর্মণ, রাঙা নাও, তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- পুথিঘর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৪৩
  • স্রোতে কাঠ ভাসিয়ে দেওয়া যে-সব সময়ে বড়ো সহজ কাজ, তা মনে কর না। অনেক সময়ে মাঝ পথে নদীর বাঁকে কাঠে কাঠে লেগে এমন জমাট বেঁধে যায় যে আবার রীতিমতো হাঙ্গামা করে তাদের জট ছাড়িয়ে না দিলে কাঠ আর চলতে পারে না। এ কাজে বিপদ খুবই; অনেক সময়ে হঠাৎ কাঠের জমাট খুলে গিয়ে কাঠগুলো এমন হুড়হুড় করে ভেসে আসে যে তার সামনে পড়ে অনেক মানুষের প্রাণ যায়। কারখানায় এলে পর সেখানকার লোকেরা কাঠগুলোকে এক-এক করে কারখানার মুখের মধ্যে পুরে দেয়, আর সেখানে করাতকলে কাঠগুলো আপনা-আপনি কেটে চিরে তক্তা হয়ে বেরিয়ে আসে।
    • সুকুমার রায়, কাঠের কথা, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২৭৪
  • আপনারা সবাই গাছ লাগাবেন এবং গাছের যত্ন নেবেন। শুধু গাছ লাগালে হবে না, গাছ যাতে টিকে থাকে, সে জন্য যত্ন করতে হবে। সেই গাছ একদিন ফল দেবে, কাঠ দেবে বা ওষুধ দেবে; আপনারা নানাভাবে উপকৃত হবেন।
    • শেখ হাসিনা; বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২১’–এর উদ্বোধনকালে দেওয়া বক্তব্যে, উদ্ধৃত: প্রথম আলো

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]