ফড়িং
অবয়ব
ফড়িং হলো সন্ধিপদী পর্বের অন্তর্গত এক ধরনের পতঙ্গ। এদের বৃহৎ যৌগিক চোখ, দুই জোড়া শক্তিশালী ও স্বচ্ছ পাখা থাকে। অন্যান্য পতঙ্গের মতো ছয়টি পা থাকলেও এরা হাঁটতে পারে না, এদের পা কাঁটাযুক্ত এবং ডালপালায় বসার উপযোগী।
উক্তি
[সম্পাদনা]- ফড়িং পাওয়া যায় না, এমন দেশ খুব কমই আছে। যেদেশে লতাপাতা আছে আর সবুজ মাঠ আছে, সেদেশেই ফড়িং পাওয়া যাবে। নানান দেশে নানানরকমের ফড়িং তাদের রঙ এবং চেহারাও নানানরকমের, কিন্তু একটি বিষয়ে সবারই মধ্যে খুব মিল দেখা যায়। সেটি হচ্ছে লাফ দিয়ে চলা। এই বিদ্যায় ফড়িঙের একটু বিশেষরকম বাহাদুরি দেখা যায়, কারণ অন্যান্য অনেক পোকার তুলনায় ফড়িঙের চেহারাটি বেশ বড়োই বলতে হবে।
- সুকুমার রায়, ফড়িং, সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী ও কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩০২
- ঘাসের বনে আনন্দে আজ
সবুজ ফড়িং লাফিয়ে আসে,
আমার মনের চপল ফড়িং
ঘুরছে তাহার আশে-পাশে।- সুনির্মল বসু, সবুজ-ফড়িং, সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা- সুনির্মল বসু, প্রকাশক- মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩৪ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ২০
- ফড়িঙের কান বড় মজার জিনিস। বড় প্রাণীদের কান মাথার উপরেই লাগানো থাকে, কিন্তু ফড়িংদের কান দেহের সেখানে দেখিতে পাওয়া যায় না। সাধারণ ফড়িঙের সম্মুখের পা পরীক্ষা করিলে, তাহাতে একটু নীচু গোলাকার জায়গা দেখা যায়। ইহাই ফড়িঙের কান। কোনো ফড়িঙের কান আবার পায়ের গোড়ায় অর্থাৎ বুকের উপরেও বসানো থাকে।
- জগদানন্দ রায়, ফড়িং, পোকা-মাকড়- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩১৮
- গঙ্গা ফড়িং
লাফিয়ে চলে;
বাঁধের দিকে
সূর্য্য ঢলে।
পাল্কী চলে রে!
অঙ্গ ঢলে রে!- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, পাল্কীর গান, কুহু ও কেকা - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৫
- একদিন একটা ফড়িং এসেছিল, সেটা দেখতে এমনি অদ্ভুত যে কি বলব। চুপ করে বসে থাকলে কখনো তাকে দেখে বলতে পারবে না যে সে খানিকটা গাছের ছাল নয়, সে একটা ফড়িং। হাত-পাগুলো গাছের ডালের মতো, পাখাগুলো গাছের ছালের মতো, রঙটি অবিকল শুকনো গাছের মতো।
- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, জ্বালাতন, উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, শান্তা শ্রীমানি সম্পাদিত, প্রকাশক- বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রকাশসাল ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৮৮৮
- ওটা কি কাদার উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নদীতে নাম্ছে। তারা ভাব্ল ফড়িং। কিন্তু এত বড় ফড়িং ত তারা কখনো দেখেনি, তাই ছুট্টে সেটা ভাল করে দেখ্তে গেল। কাছে গিয়ে দেখে, ওমা! এত ফড়িং নয়! এ যে সেই বুড়ো বামন!
- সুখলতা রাও, মালতী পারুল, গল্পের বই - সুখলতা রাও, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশক-ইউ, রায় এণ্ড সন্স্, প্রকাশসাল- ১৯১২ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৯ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৪০-১৪১
- পক্ষীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াইয়া জীবিত থাকিবার জন্যই ঘাসের ভিতরকার ফড়িঙের রঙ্ সবুজ এবং শুষ্ক তৃণমধ্যস্থ ফড়িঙের রঙ্ পাটল হইয়াছে।
- জগদানন্দ রায়, প্রকৃতির বর্ণ-বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিকী- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ১৬৫
- ভালো কথা শুনি যেই চট্পট্ লিখি তায়—
ফড়িঙের ক’টা ঠ্যাং, আরশুলা কি কি খায়;
আঙুলেতে আঠা দিলে কেন লাগে চট্চট্,
কাতুকুতু দিলে গরু কেন করে ছট্ফট্।- সুকুমার রায়, নোট বই, সুকুমার সমগ্র রচনাবলী- প্রথম খণ্ড, সম্পাদনা- পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৭ বঙ্গাব্দ),পৃষ্ঠা ৬০
- রমু আবার বলিল: ওই বাঁশের পুল পার হইয়া যে-বাড়ি, সে-বাড়িতে থাকে গফুর, আমার চাচাত ভাই। সে খুব ফড়িং ধরে আর আড়কাঠি বিঁধাইয়া ছাড়িয়া দেয়, তারা ছটফট করিয়া মরিয়া যায়। দেখিয়া আমার মনে বড় কষ্ট লাগে। তুমি ফড়িং ধরনা, তুমি কত ভাল।
- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দুরঙা প্রজাপতি, তিতাস একটি নদীর নাম- অদ্বৈত মল্লবর্মণ, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশক- পুথিঘর, কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬৫ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩৮৪
- দুরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘন শিহরণ
মরণের সাথে লড়িয়াছে;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বত্থের কাছে
এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা-একা;
যে-জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের— মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা
এই জেনে।- জীবনানন্দ দাশ, শব, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, প্রকাশক- নাভানা, প্রকাশস্থান- কলকাতা, প্রকাশসাল- ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৬১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৭৫
- সকল ফড়িঙের মাথাতেই দুটা শুঁয়ো লাগানো থাকে। স্ত্রী-ফড়িঙের লেজের শেষে হুলের মত একটা অঙ্গ দেখা যায়। ইহা ডিম পাড়িবার যন্ত্র। এই হুল মাটির তলায় প্রবেশ করাইয়া প্রত্যেক ফড়িং প্রায় এক-শত দেড়-শত ডিম পাড়ে। কিছু দিন মাটির তলায় থাকার পরে, সেগুলি হইতে ফড়িঙের ছোট বাচ্চা বাহির হয়।
- জগদানন্দ রায়, ফড়িং, পোকা-মাকড়- জগদানন্দ রায়, প্রকাশক- ইণ্ডিয়ান প্রেস লিমিটেড, এলাহাবাদ, প্রকাশসাল- ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ (১৩৩১ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৩১৭
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় ফড়িং সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে ফড়িং শব্দটি খুঁজুন।
উইকিমিডিয়া কমন্সে ফড়িং সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।