শত্রু
অবয়ব
শত্রু বলতে তাদের বোঝানো হয়, যাদের জোরপূর্বক প্রতিকূল বা হুমকি হিসাবে দেখা হয়। শব্দটি সাধারণত যুদ্ধের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়, একটি বিরোধী দলকে হুমকি হিসেবে বোঝাতে। শত্রু দ্বারা, সাধারণ প্রতিপক্ষদের বুঝায়।
উক্তি
[সম্পাদনা]- এদেশ বিপন্ন আজ জানি আজ নিরন্ন জীবন
মৃত্যুর প্রত্যহ সঙ্গী নিয়ত শত্রুর আক্রমণ
রক্তের আল্পনা আঁকে কানে বাজে আর্তনাদ সুর,
তবুও সুদৃঢ় আমি, আমি এক ক্ষুধিত মজুর।
আমার সম্মুখে আজ এক শত্রু: এক লাল পথ,
শত্রুর আঘাত আর বুভুক্ষায় উদ্দীপ্ত শপথ।- সুকান্ত ভট্টাচার্য - ছাড়পত্র, শত্রু এক ১৯৪৭ (পৃ. ৪৩)।
- “এই বিপুল পৃথিবীতে ভারতবর্ষের একটি মাত্র শত্রু আছে, যে শত্রু শতাধিক বর্ষকাল তাহাকে শোষণ করিয়াছে, যে শক্ত ভারতমাতার জীবন-শোণিত চুষিয়া লইতেছে—সে শত্রু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ যে দিন পরাভূত হইবে, সেই দিনই ভারতবর্ষ স্বাধীন হইবে। এই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবিচ্ছিন্ন আপোষহীন সংগ্রামেই আমার সমস্ত জীবন কাটিয়াছে।
- নৃপেন্দ্রনাথ সিংহ - নেতাজীর জীবনী ও বাণী ১৯৪৫ (পৃ. ১৩১)।
- এদিকে উৎকর্ণ দিন, মণিপুর, কাঁপে মণিপুর
চৈত্রের হাওয়ায় ক্লান্ত, উৎকণ্ঠায় অস্থির দুপুর—
কবে দেখা দেবে, কবে প্রতীক্ষিত সেই শুভক্ষণ
ছড়াবে ঐশ্বর্য পথে জনতার দুরন্ত যৌবন?
দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশে অতর্কিতে শত্রু তার পদচিহ্ন রাখে—
এখনো শত্রুকে ক্ষমা? শত্রু কি করেছে ক্ষমা
বিধ্বস্ত বাংলাকে?- সুকান্ত ভট্টাচার্য - সুকান্ত সমগ্র, মণিপুর ১৯৫৭ (পৃ. ১১৫-১১৮)।
- পিঁপ্ড়ে ও মৌমাছিদের দলে যেমন স্ত্রী, পুরুষ ও কর্ম্মী আছে, উইদের মধ্যেও ঠিক তাহাই দেখা যায়। যদি কখনো উইয়ের ঢিবি পরীক্ষা করিবার সুযোগ পাও, তবে তোমরা সেখানে ছোট ও বড় দুই রকম উই দেখিতে পাইবে। [...] বাহির হইতে কোনো শত্রু আসিয়া পড়িলে, ছোট কর্ম্মীর দল নিরাপদ জায়গায় লুকাইয়া পড়ে। তখন কেবল সৈনিকেরাই তাহাদের সেই ধারালো দাঁত দিয়া শত্রুকে তাড়া করে। ইহাদেরও চোখ নাই। কোথায় শত্রু আছে, তাহা বোধ হয় শুঁয়ো দিয়াই উহারা জানিতে পারে। কে শত্রু এবং কে মিত্র, তাহা বুঝিয়া লইতে ইহারা কখনই ভুল করে না।
- জগদানন্দ রায় - পোকা-মাকড়, স্ত্রী, পুরুষ ও কর্ম্মী-উই ১৯২৪ (পৃ. ২৪২-২৪৫)।
- আমাদের অরণ্যের এবং ফলের বাগানের গাছসকল তাহাদের বৃদ্ধির প্রত্যেক অবস্থায় কীটশক্রদলের আক্রমণের বিষয়; এই কীটশত্রুগণ বাধাপ্রাপ্ত না হইলে শীঘ্রই বৃক্ষসকলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করিত। [...] সৌভাগ্যক্রমে বৃক্ষদের কীটশত্রু সকলেরও নিজেদের নিত্য-নিযুক্ত শত্রু যে নাই তাহা নহে; এই শত্রুদের মধ্যে অনেক জাতীয় পক্ষী আছে, যাহাদের অস্ত্রসজ্জা এবং অভ্যাসসকল কীট-আক্রমণ-ব্যাপারে তাহাদিগকে বিশষরূপে যোগ্যতা দান করে, এবং তাহাদের সমস্ত জীবন এই কীটের অনুধাবনে ব্যয়িত হয়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - অনুবাদ-চর্চ্চা ১৯৩৩ (পৃ. ৮)।
- তুমি আমাকে, তোমার মুখে লাগাম দিয়া, পিঠে উঠিতে দাও, তাহা হইলেই, আমি অস্ত্র লইয়া তোমার শত্রু দমন করি। অশ্ব সম্মত হইল। মনুষ্য তৎক্ষণাৎ তাহার পৃষ্ঠে আরোহণ করিল; কিন্তু, হরিণকে দমন করিতে না গিয়া, অশ্বকে আপন আলয়ে লইয়া গেল। তদবধি অশ্বগণ মনুষ্যজাতির বাহন হইল।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - কথামালা, অশ্ব ও অশ্বারোহী ১৮৭৭ (পৃ. ৪৪-৪৫)
- রথের অগ্রে ইন্দ্রের তেজ, মোরা পূজা করি তায়,
আমরা অটল শত্রুর ব্যূহে ইন্দ্রেরি মহিমায়;
তিনি আহ্বান শুনুন্ মোদের পূর্ণ রাখুন্ তূণ,
হীন শত্রুর ছিন্ন হউক অধম ধনুর্গুণ।- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত দ্বারা অনূদিত - তীর্থ-সলিল, জাতীয় সঙ্গীত। সুদাস ১৯০৮ (পৃ. ১২৭-১২৮)।
- শত্রু-পরিবার আপন পরিবার মধ্যে পরিগণিত,—ইহাই রাজনীতি এবং ইহাই রাজপদ্ধতি। এই অকিঞ্চিৎকর অস্থায়ী জগতের প্রতি অকিঞ্চিৎরূপে দৃষ্টি করাই কর্ত্তব্য। ঈশ্বরের মহিমা অপার।
- মীর মশাররফ হোসেন - বিষাদ-সিন্ধু, ঊনবিংশ প্রবাহ।
- বিনয়, সৌজন্য ও শিষ্টাচারে পরও আপন হয়, শত্রুও মিত্র হয়। সর্ব্ববিষয়ে উদারতা প্রকাশ করা সকলেরই কর্ত্তব্য। চিত্ত উদার হইলে, বসুধাবাসি জীবগণ আত্মীয়স্থানীয় হয়। সংসারে কেহ কাহারও শত্রু বা মিত্র হইয়া জন্মগ্রহণ করে না; ব্যবহারেই শত্রু বা মিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়।
- প্রিয়দর্শন হালদার - বিদ্যাসাগর জননী ভগবতী দেবী।
- আমরা এই কথাই বলে থাকি যে, বিদেশীরা আমাদের শত্রুতা করছে। কিন্তু তার চেয়ে বড়ো শত্রু আছে আমাদের মজ্জার মধ্যে, সে আমাদের ভীরুতা। সেই ভীরুতাকে জয় করার জন্যে বিধাতা আমাদের শক্তি পাঠিয়ে দিয়েছেন তাঁর জীবনের মধ্য দিয়ে; তিনি আপন অভয় দিয়ে আমাদের ভয় হরণ করতে এসেছেন।
- মহাত্মা গান্ধীর উদ্দেশ্যে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, মহাত্মাজির পুণ্যব্রত।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]উইকিপিডিয়ায় শত্রু সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ রয়েছে।
উইকিঅভিধানে শত্রু শব্দটি খুঁজুন।