ইলিশ

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে

ইলিশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Tenualosa ilisha) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশপূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। বাঙালিদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ইলিশ ভারতের বিভিন্ন এলাকা যেমন পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরাআসামে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।[১] যদিও ইলিশ লবণাক্ত জলের মাছ বা সামুদ্রিক মাছ, বেশিরভাগ সময় সে সাগরে থাকে কিন্তু বংশবিস্তারের জন্য প্রায় ১২০০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে ভারতীয় উপমহাদেশে নদীতে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশে নদীর সাধারণ দূরত্ব ৫০ কিমি থেকে ১০০ কিমি। ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের পদ্মা (গঙ্গার কিছু অংশ), মেঘনা (ব্রহ্মপুত্রের কিছু অংশ) এবং গোদাবরী নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এর মাঝে পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভালো বলে ধরা হয়। ভারতের রূপনারায়ণ নদী, গঙ্গা, গোদাবরী নদীর ইলিশ তাদের সুস্বাদু ডিমের জন্য বিখ্যাত। ইলিশ মাছ সাগর থেকেও ধরা হয় কিন্তু সাগরের ইলিশ নদীর মাছের মত সুস্বাদু হয় না। দক্ষিণ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশেও এই মাছ পাওয়া যায়। সেখানে মাছটি "পাল্লা" নামে পরিচিত। এই মাছ খুব অল্প পরিমাণে থাট্টা জেলায় ও পাওয়া যায়। বর্তমানে সিন্ধু নদীর জলস্তর নেমে যাওয়ার কারণে পাল্লা বা ইলিশ আর দেখা যায় না।

রূপোলি নদীর রূপোলি ইলিশ-ইশ, চোখে ঝলসায়!~বুদ্ধদেব বসুর

ইলিশ সম্পর্কে উক্তি[সম্পাদনা]

   

‘ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি
ইলিশ মাছের ডিম।
ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি
দিনের বেলায় হিম।’

ইলশে গুঁড়ি কবিতা - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
   

‘সোনা নাচে কোনা
বলদ বাজায় ঢোল
সোনার বউ রেঁধে রেখেছে
ইলিশ মাছের ঝোল।’

কবিতা-যোগীন্দ্রনাথ সরকার
  • বেহেশতের খাবারের বর্ণনায় যদি ইলিশের কথা উল্লেখ থাকত, তাহলে কেউই পাপ করে নরকে যেত না।
    • সৈয়দ মুজতবা আলী
   

আকাশে আষাঢ় এলো; বাংলাদেশ বর্ষায় বিহবল।মেঘবর্ণ মেঘনার তীরে-তীরে নারিকেলসারি
বৃষ্টিতে ধূমল; পদ্মাপ্রান্তে শতাব্দীর রাজবাড়ি
বিলুপ্তির প্রত্যাশায় দৃশ্যপট-সম অচঞ্চল।
মধ্যরাত্রি; মেঘ-ঘন অন্ধকার; দুরন্ত উচ্ছল
আবর্তে কুটিল নদী; তীর-তীব্র বেগে দেয় পাড়ি
ছোটে নৌকাগুলি; প্রাণপণে ফেলে জাল, টানে দড়ি
অর্ধনগ্ন যারা, তারা খাদ্যহীন, খাদ্যের সম্বল।
রাত্রি শেষে গোয়ালন্দে অন্ধ কালো মালগাড়ি ভরে
জলের উজ্জ্বল শস্য, রাশি-রাশি ইলিশের শব,
নদীর নিবিড়তম উল্লাসে মৃত্যুর পাহাড়।
তারপর কলকাতার বিবর্ণ সকালে ঘরে ঘরে
ইলিশ ভাজার গন্ধ; কেরানীর গিন্নির ভাঁড়ার
সরস সর্ষের ঝাঁজে। এলো বর্ষা, ইলিশ-উৎসব।
এলো বর্ষা, ইলিশ-উৎসব।’

ইলিশ কবিতা -বুদ্ধদেব বসু
  • {{কবিতা|‘ওটা কী? জেলের নৌকা? তাই তো!

জাল টেনে তোলা দায়, রূপোলি নদীর রূপোলি ইলিশ- ইশ, চোখে ঝলসায়! ইলিশ কিনলে?- আঃ, বেশ, বেশ, তুমি খুব ভালো, মাঝি। উনুন ধরাও, ছোকানু দেখাক রান্নার কারসাজি। পইঠায় বসে ধোঁয়া-ওঠা ভাত, টাটকা ইলিশ-ভাজা- ছোকানু রে, তুই আকাশের রানী, আমি পদ্মার রাজা।’

    • ‘নদীর স্বপ্নে’~বুদ্ধদেব বসুর কিশোর কবিতা
  • ‘পাশেই কাঠের প্যাকিং কেসে এক সারি মাছ ও এক পরল করিয়া বরফ বিছাইয়া চালানের ব্যবস্থা হইতেছে। খানিক দূরে মেন লাইন হইতে গায়ের জোরে টানিয়া আনা একজোড়া উঁচুনিচু ও প্রায় অকেজো লাইনের উপর চার-পাঁচটা ওয়াগন দাঁড়াইয়া আছে। মাছের বোঝাই লইয়া যথাসময়ে ওয়াগনগুলি কলিকাতায় পৌঁছিবে। সকালে বিকালে বাজারে বাজারে ইলিশ কিনিয়া কলিকাতার মানুষ ফিরিবে বাড়ি। কলিকাতার বাতাসে পাওয়া যাইবে পদ্মার ইলিশ মাছ ভাজার গন্ধ।’ বোঝা যায়, ইলিশের বিপণন-বাণিজ্য ছিল সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই।
    • পদ্মানদীর মাঝি।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
  • ইল্শে মাছ- যে মাছের গন্ধ মুখে লালা ঝরায়, বিড়ালকে মাতাল করে তোলে। বেশি খেলে কি আর রক্ষে আছে!’
    • কাজী নজরুল ইসলাম।‘স্মৃতি-রঙ্গ’ নামক গদ্য -জুলফিকার হায়দার
  • মাছের রাজা ইলিশ/ মানুষের রাজা পুলিশ।
    • কবিতা~নির্মলেন্দু গুণ
  • {{কবিতা|হালকা হাওয়ায় মেঘের ছাওয়ায়

ইলশেগুঁড়ির নাচ, ইলশেগুঁড়ির নাচন দেখে নাচছে ইলিশ মাছ।

    • সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
  • ‘মাছের রাজা ইলিশ, বাত্তির রাজা ফিলিপস্!’
    • আশির দশকে রেডিও-টিভিতে একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের সংলাপ।
  • ‘রাজার পালন মাছ ইলিশা রে,/ জামাই ভোজনের মাছ ইলিশা রে,/ রান্ধনী-পাগল মাছ ইলিশা রে।/ ছাওয়াল কান্দাইন্যা মাছ ইলিশা রে।’
    • ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকগানের পংকক্তি
  • ‘বর্ষার মাঝামাঝি। পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরার মরশুম চলিয়াছে। … নৌকার খোল ভরিয়া জমিতে থাকে মৃত সাদা ইলিশ মাছ। লণ্ঠনের আলোয় মাছের আঁশ চকচক করে, মাছের নিষ্পলক চোখগুলোকে স্বচ্ছ নীলাভ মণির মত দেখায়।’
    • পদ্মানদীর মাঝি।মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
  • ‘ইল্লিশ, খল্লিশ, ভেটকী, মদগুর এব চা/ রোহিত রাজেন্দ্র, পঞ্চমৎস্যা নিরামিষা।’

অর্থাৎ ইলিশ, খলসে, ভেটকি, মাগুর এবং রুই – এই পাঁচ প্রকার মাছ নিরামিষ।

    • নিরামিষভোজী ব্রাহ্মণদের মাছ খাওয়ার জন্য তৈরিকৃত শ্লোক
  • ‘ভাপা, ভাজা বা পাতলা ঝোল, যেকোনোভাবে রান্না করা হোক, ইলিশ সুস্বাদু। স্রেফ কালোজিরে ও বেগুন দিয়ে পাতলা ঝোলও ইলিশের একটি প্রিয় পদ। এছাড়া শর্ষেবাটা দিয়ে ঝোল বা গা-মাখা কিংবা কলাপাতায় মুড়ে ভাপা বা ভেজে পাতুরি। ইলিশ মাছ কিংবা ইলিশ মাছের ডিম কাঁচকলা দিয়ে ঝোল করার রীতিও চালু আছে। ইলিশ মাছের ডিমের অম্বলও খান অনেকে। হিন্দু বাঙালিদের মধ্যে চল না থাকলেও মুসলমানদের মধ্যে ইলিশ রান্নায় পেঁয়াজ রসুনের ব্যবহার চালু রয়েছে।’
    • বাঙালির খাদ্যকোষ গ্রন্থ~গবেষক মিলন দত্ত।পৃষ্ঠা:৫০
  • ‘ইলিশ আবার বাঙালি হিন্দু পরিবারে মঙ্গলের দ্যোতক। অনেক পূর্ববঙ্গীয় হিন্দু পরিবারে এখনো সরস্বতীপুজোর দিন জোড়া ইলিশ ঘরে এনে ধান, দূর্বা, সিঁদুর দিয়ে বরণ করে ঘরে তুলে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলিশ মাছ খাওয়া শুরু হয়।’
    • বাঙালির খাদ্যকোষ গ্রন্থ পৃষ্ঠা:৫০~গবেষক মিলন দত্ত।
  • ‘এখো গুড় দিয়ে খই মেখে, সেই খইতে আগুন জ্বালিয়ে বেতের চুপড়িতে নিষ্কণ্টক ইলিশ ঝুলিয়ে তৈরি করত স্মোক হিলসা।’ **(নুনেতে ভাতেতে, ২, পৃ ১০৮)।-অনিরুদ্ধ ফাল্গুনি সেন
  • ‘ইলিশ মাছের ডিমকে পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হতো আখার ওপর – দিন দশ-পনেরো। আখার উপর তাপ পেয়ে আরও জমাট বাঁধত সেই ইলিশের ডিম। তারপর আঁশবঁটি দিয়ে কেটে টুকরো করে, কুমড়ো বা লাউ দিয়ে তৈরি হতো সেই ঝোল ঝোল অমৃত।’
    • (রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল, নুনেতে ভাতেতে, পৃ ৩২)
  • গোয়ালন্দগামী ইস্টিমারের কেন্টিনে ইলিশ মাছের ঝোল আর গরম ভাত বিক্রি হচ্ছে। না-খেলে নাকি এর স্বাদ বোঝানো যায় না! পেটচুক্তি খাওয়ার দাম চার পয়সা। তাও মানুষের খাওয়ার ক্ষমতা নেই! তাই শুধু ঝোল আর ভাত বিক্রির ব্যবস্থা আছে। দাম এক পয়সা। তাছাড়া আরো একটা ব্যবস্থা আছে – ইলিশ মাছের দ্যাখনাই! এর দাম দেড় পয়সা। মাছ সমেত ঝোলভাত দেবে। মাছটা দেখে-দেখে ভাত খাওয়ার পর মাছ ফেরত নিয়ে যাবে। এক লোক দ্যাখনাই নিয়েছে। বিল দেওয়ার সময় দোকানদার দুই পয়সা কেটে নিয়েছে। খরিদ্দার জিজ্ঞেস করল – দুই পয়সা ক্যান? আমি তো দ্যাখনাই খাইছি।

দোকানদার বলে – ওই হালা, আমি দেহি নাই? তুই কয়েকবার চোষণ দিছস!

    • সৈয়দ মুজতবা আলীর রম্যগল্প
  • {{কবিতা|বর্ষা এলে ইলিশ উৎসবে মাতে মোহনা

পদ্মার ইলিশের সত্যিই নেই কোন তুলনা ।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]